সাগর সেন ১৯৩২ সালের ১৫ মে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি বড় হয়েছেন কলকাতায়। তিনি ষাট দশকের শুরুর দিকে রবীন্দ্রসংগীত জগতে পদার্পণ করেন, যখন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাস ও চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের মতো মহারথীরা জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’র সঙ্গে তার প্রথম রেকর্ড সম্পন্ন হয় ১৯৫৮ সালে। তারপরই তিনি কলকাতার আকাশবাণীতে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হিসেবে পরিবেশনা শুরু করেন।
সন্তোষ সেনগুপ্তের পরিচালনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শাপমোচন (১৯৬৬) ও বাল্মিকী (১৯৬৭)Ñএই অপেরা দুটির রেকর্ডিংয়ে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মায়ার খেলা’ অপেরার ‘আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পান’ এ গানটি সাগর সেনকে রবীন্দ্রসংগীত জগতে গুরুত্বপূর্ণশিল্পী হিসেবে পরিচিতি দান করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সত্তর দশক ও আশি দশকের শুরুর দিকে তিনি গ্রামোফোন কোম্পানি অব ইন্ডিয়া লিমিটেডের সঙ্গে প্রচুর গান রেকর্ড করেন। ১৯৭৪ সালে তার প্রথম লংপ্লে রেকর্ড প্রকাশ পায়, যেখানে পূজা ও প্রেম পর্বের সাতটি করে ১৪টি রবীন্দ্রসংগীত স্থান লাভ করে। ‘আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান’ ছাড়াও তার গাওয়া জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীত গুলোর মধ্যে ‘বঁধূ মিছে রাগ করো না’, ‘জীবনে আমার যত আনন্দ’, ‘আমায় থাকতে দে না আপন মনে’ ও
‘তোমার গোপন কথাটি সখী
রেখো না মনে’ অন্যতম।
তিনি কলকাতায় ‘রবি রশ্মি’ নামে একটি সংগীত প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন ও এ প্রতিষ্ঠানটি কলকাতায় জনপ্রিয়তা লাভ করে। সাগর সেন কিছু আধুনিক বাংলা গানেও কণ্ঠ দেন। যে যেখানে দাঁড়িয়ে (১৯৭৪) ও পরিচয়ের (১৯৭৯) মতো আবির্ভাব ও মন্ত্রমুগ্ধ সিনেমার গানেও তিনি কণ্ঠ দেন। তিনি ১৯৭৯ সালে পরিচয় সিনেমায় ‘আজ জোৎস্নারাতে সবাই
গেছে বনে’ গানটি গেয়ে বিএফজে
পুরস্কার লাভ করেন।
সাগর সেনের তিন পুত্র প্রিয়াম সেন, প্রিতম সেন ও প্রমিত সেন। এদের মধ্যে প্রমিত সেন প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী।
১৯৮১ সালে তার ক্যান্সার ধরা
পরে এবং ১৯৮৩ সালের ৪ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।