স্মার্ট এসএমই, স্মার্ট বাংলাদেশের আক্ষেপ কি এবার ঘুচবে?

মৌসুমী ইসলাম: প্রতি বছর বাজেট এলে চাওয়া-পাওয়া আর পাওয়া না পাওয়ার হিসেবে অনেক বড় হয়ে ওঠে। আগের বছরের তুলনায় এ বছর কী পাব আর কী পেলাম না সে হিসেবে ক্রাফ ছিলÑসে সবার নয়। তার মধ্যেও আশা-আকাক্সক্ষার নানা দোলাচলে, দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে পরিচিত অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করা সংগঠনগুলোর একটাই চাওয়া-পাওয়াতে আটকে থাকে; তা হলো নীতি সহায়তা।

এবারের বাজেটে সবকিছু ছাপিয়ে নীতি সহায়তার বিষয়টুকু আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়তা করবে কি? 

বাংলাদেশের জিডিপিতে শিল্পের অবদান ৩৭ শতাংশ আর শতকরা ৯৯ ভাগ শিল্প ও ব্যবসা কুটিরশিল্পের আওতাভুক্ত; যা এখন দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে আর মোট শিল্পকর্মসংস্থানের ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ। এ খাত মোট অভ্যন্তরীণ শিল্পপণ্য চাহিদার ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ জোগান দেয়। এ বছরকে সরকার জাতীয় হস্তশিল্প বছর হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে শিল্পনীতি ২০২২ ও এসএমই নীতিমালা ২০১৯, এসডিসি ২০৩০, রূপকল্প ২১০০, রূপকল্প ২০৪১, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, বিভিন্ন নীতিমালা ও কৌশলপত্রে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ২০৩১ সালের মধ্যে এ খাতের অবদান ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।

এত কিছুর মাঝেও সবচেয়ে বড় সমস্যা বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং দেশের ভেতরে ডলার ও সুদ হারের সংকট। সুদের হার বাজারভিত্তিক করে দেয়ার পর থেকে উদ্যোক্তারা আছেন বেশ চাপে। এরই মধ্যে ব্যাংকগুলো তাদের ঋণের সুদের হারের পরিবর্তনের কথা জানাতে শুরু করেছে; যা ব্যবসায়ের খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে ডলার সংকটের কারণে ডলার পরিস্থিতি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজারে ভিত্তি দামের চাপ যেকোনো ধরনের কাঁচামাল আমদানি এবং দেশের রপ্তানিতে বড় বাধা তৈরি করছে। কারণ ডলারের তারতম্যের কারণে আমদানি করা পণ্যের দাম ও রপ্তানি পণ্যের দামের ফারাকের মাঝেই শুভঙ্করের ফাঁকির মতো লাভের অংশটুকু হাওয়ায় উড়িয়ে যাচ্ছে।

সাত শতাংশ সুদে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে সরকারের কাছে নতুন করে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন এসএমএস ফাউন্ডেশন। বিতরণকারী ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠান পাঁচ শতাংশ এবং এসএমএস ফাউন্ডেশন ২ শতাংশ পাবে। এর আগে করোনা মহামারির সময় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এসএমই ফাউন্ডেশনকে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলে সেখান থেকে ২৯৪ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। কিন্তু ঋণের বেশিরভাগ অর্থ এখনও ফেরত আসেনি। এর মাঝে নতুন করে চাওয়া এই অর্থ এবং এ অর্থের জোগান নিয়ে সংশয় এবং পরিস্থিতি যাতে ঘোলাটে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ ব্যাংক খাতের এখন যে পরিস্থিতি তাতে ৭ শতাংশের এই ঋণ পরবর্তীতে কত শতাংশে গিয়ে ঠেকবে, তা নিয়েও চিন্তার খোরাক রয়েছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের কথা বলা হলেও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলো থেকে কি সহজে সাড়া পাওয়া যায়? সরকারের নানা পরিকল্পনা ও মহাপরিকল্পনারে মাঝে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে যে ধরনের নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন তাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি। অত্যন্ত অঞ্চলের পণ্য ইউরোপ কিংবা আমেরিকার বড় বড় শহরগুলোয় প্রাপ্তির বিষয়ে দূতাবাসগুলোর ভূমিকা এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। এমনকি নতুন বাজারে তৈরিতে নতুন ধরনের পণ্য প্রদর্শনীতে যদি দূতাবাসগুলো এগিয়ে আসে তাহলে সমস্যার সমাধান সহজেই করা যায়।

আমরা এরই মধ্যে জেনেছি ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা হবে। যেখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে, অগ্রাধিকার দেয়া হবে স্বাস্থ্য শিক্ষায়। বেশ অসংখ্য জনমুখী করারও পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এসেছে বলে আমরা জেনেছি। সব মিলিয়ে যদি স্বস্তিতে একটি অর্থনীতি এবং দেশকে এগিয়ে নিতে হয়, তবে অবশ্যই ক্ষুদ্র, অতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

নির্বাচনের ইশতেহার মোতাবেক বাজেট প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের দিকে সরকার নজর দেবে এটাই স্বাভাবিক। সেই ইশতেহারের বাণিজ্যিক মূল ধারাগুলো যাতে সঠিক থাকে সে বিষয়ে নজর দেয়াটা জরুরি। বাস্তব মাঠের চিত্রের সঙ্গে বড় কর্তাদের টেবিলের অঙ্কের চিত্রটাও যাতে সমান তালে মিলে সেদিকেও নজর দিতে হবে।

মনে রাখতে হবে বৈশ্বিক সংকটের মাঝে দেশীয় অর্থনীতি যতটা চাঙা করা যাবে, ততটাই টিকে থাকার লড়াইটা হবে শক্ত।

আর লড়াইটার জন্য ক্ষুদ্র, অতি ক্ষুদ্র, মাঝারি উদ্যোক্তাদের দিতে হবে সব ধরনের নীতিগত সহায়তা; তবেই মিলবে সফলতার চাবিকাঠি।

চেয়ারপারসন

প্রমিক্সকো গ্রুপ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০