শামসুল হক: মুসলিমদের যে কয়েকটি বিষয় মানতে হয় তার মধ্যে অন্যতম রোজা। সবার জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে। তাই প্রতিবছর রমজান মাসে রোজা রাখা সব সুস্থ মানুষের কর্তব্য। সাহ্রি ও ইফতার রোজার অন্যতম দুটি অনুসঙ্গ। এগুলোকে ঘিরে কত অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণ যে ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রায়ই ছেলেবেলার ইফতারের কথা মনে পড়ে।
ছেলেবেলার ইফতারের কথা মনে হলে অনেক কিছু স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে। উত্তরবঙ্গের জেলা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ আজ থেকে ২৫ বছর আগে তেমন উন্নত ছিল না, এ কথা অস্বীকার করার জো নেই। সে সময় আজকের মতো মোবাইল ফোন যেমন ছিল না, তেমনি স্যাটেলাইট টেলিভিশন বা রেডিও খুব একটা ছিল না। একটি মাত্র সরকারি টেলিভিশন আর বাংলাদেশ বেতারই ছিল সম্প্রচার মাধ্যম। টেলিভিশন ও রেডিও কেনার মতো সামর্থ্য তেমন ছিল না অনেকেরই। যারা তুলনামূলক সচ্ছল ও শৌখিন প্রকৃতির, তারাই মূলত গ্রামে দুটি যন্ত্রের মালিক হতেন। ইফতারের সময় হয়েছে, কথাটুকু শোনার জন্য অনেকে তাদের বাড়িতে ভিড় করতেন।
সারা দিন রোজা রেখে ইফতারের জন্য মাইকে ভেসে আসা আজানের অপেক্ষায় থাকতেন সবাই। আজান দেওয়ার পর সবাই ইফতার করতেন। তবে ইফতারের সময় বিদ্যুৎ না থাকলে, বিপত্তিতে পড়তেন। এ উপজেলার থানা সদরের সবচেয়ে বড় হাট মীরগঞ্জের হাট। হাটে অনেক দূর থেকে মানুষ আসতেন। পাশের উপজেলারও মানুষ হাটে আসতেন বাজার করতে। রমজান মাসে ইফতারের সময় সব শ্রেণির মানুষ একে অপরের সঙ্গে বসে ইফতার করতেন। ছোট থাকার কারণে বাবা বা চাচার সঙ্গে হাটে আমিও যেতাম।
মাঝে মাঝে রোজা না রাখলেও সবার সঙ্গে বসে ইফতার করতাম। খুব মজা হতো ইফতারের সময়। বিশেষ করে হাটের মাঝে সবার সঙ্গে বসে ইফতার করতে। একদিন হাটের এক কোণে অনেকের সঙ্গে ইফতারের জন্য বসে আছি। হাটের পশ্চিম কোণে মসজিদের আজানের ধ্বনি শোনার অপেক্ষায় আছি। ওই দিন আকাশ মেঘলা ছিল, যে কোনো সময় বৃষ্টি আসতে পারে। কিন্তু মাইকে আজান দিচ্ছে না। অনেকে বলছেন যে, আজান হয়ে গেছে ইফতার করেন। আবার অনেকে বললেন, না দেরি আছে, এখনও অনেক সময় বাকি। এর মধ্যে যখন একজন বলে উঠলেন, আজ বিদ্যুৎ নেই মুখে আজান দিয়েছে। তাই ইফতার করা যায়। এ কথা বলাতে মোটামুটি সবাই ইফতার করে ফেলেন। ইফতার হয়ে যাওয়ার পর লাল সূর্যি মামা পশ্চিম আকাশে আবার বের হয়। কিন্তু অনেকেই যে ইফতার করে ফেলেছেন। এখন কী করা যায়? সবার মন খারাপ হয়ে যায়। কেউ কেউ বলেন, কি আর করা যাবে আমাদের কোনো দোষ নেই।
সেই সময়ের ইফতার আইটেমে থাকত দুটাকার মুড়ি, পেঁয়াজু, খেজুর, জিলাপি প্রভৃতি। এক সঙ্গে গোল করে বসে ইফতার করা হতো। কেউ মুড়ি, কেউ পেঁয়াজু, কেউবা জিলাপি দিতেন। সবগুলো ইফতারের আইটেম এক সঙ্গে করে মাখানো হত। সবাই এক সঙ্গে বসে মুঠো মুঠো ইফতারি করতেন। এখন শহরের অনেকে আলাদা আলাদা প্লেটে করে বিভিন্ন ধরনের আইটেম নিয়ে ইফতার করেন। ছোটবেলার ইফতারিতে বাহারি পসরা না থাকলেও বেশ মজাদার ছিল। তাই আগের দিনের ইফতারটাকে খুব মনে পড়ে। ফিরে পেতে চায় মন সেই সময়ের ইফতারের দিনগুলো।
Add Comment