কাজী সালমা সুলতানা: ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে পরিষদের ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি অধিবেশনে বিক্ষোভ আর বিতর্ক হয়। একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার বাইরেও পূর্ববাংলার বহু স্থানে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে এবং আরবি হরফে বাংলা প্রচলনের প্রতিবাদে ধর্মঘট পালিত হয়। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী ও জামালপুরে পূর্ণ ধর্মঘট পালিত হয়। এসব জায়গাতেও মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে।
২২ ফেব্রুয়ারির ঢাকা আরও বিক্ষোভ প্রতিবাদ ও উত্তেজনায় বিচলিত হয়ে ওঠে। এদিন আরও বেশি রক্ত ঝরেছিল। ১৪৪ ধারা অমান্য করার কর্মসূচি এদিনও ছিল। তবে এদিন প্রতিবাদেও সঙ্গে ছিল শোক। ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা শহিদ মিনার তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ২৩ তারিখ বিকালে থেকে শুরু করে সারারাত ধরে শহিদ মিনার নির্মাণ করে। যদিও এদিন শহরের সব দোকানপাট সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকে। অফিস-আদালত এমনকি সেক্রেয়ারিয়েটের কর্মচারীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজে যোগদান করা থেকে বিরত থেকে শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভে যোগদান করেন। এদিনও পুলিশ ও সৈন্যরা বিভিন্ন জায়গায় হামলা, নির্যাতন ও ধরপাকড় অব্যাহত রাখে।
২৩ ফেব্রুয়ারিও আগের দিনের মতো পূর্ণ হরতাল পালিত হয়, তবে এদিনের প্রধান ঘটনা রেল ধর্মঘট। রেল ধর্মঘট বেলা ১টা পর্যন্ত চলে। এদিন বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে মেনে নেয়ার দাবি জানিয়ে কয়েকজন উর্দুভাষী ছাত্রও বক্তৃতা করেন। এতে ছাত্রদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সঞ্চার হয়। বিকাল ৩টায় কয়েকজন সাহসী কর্মীর চেষ্টায় মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের একটি কামরায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম শহিদ মিনারটি পরে অবশ্য শাসকগোষ্ঠী ভেঙে ফেলে। বাংলাদেশের সেই প্রথম শহিদ মিনার ভাঙা হলেও অক্ষয় হয়ে রইল শহিদদের স্মৃতি মানুষের বুকে বুকে। ‘শহিদস্মৃতি অমর হোক’ এই সেøাগান তখনই চালু হয়ে যায়। প্রথম শহিদ মিনারটি ভেঙে ফেলা হলে আলাউদ্দীন আল আজাদ লেখেন
‘স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো
চার কোটি পরিবার
খাড়া রয়েছি তো! যে-ভিত কখনো কোনো রাজন্য
পারেনি ভাঙতে
হীরের মুকুট নীল পরোয়ানা খোলা তলোয়ার
খুরের ঝটকা ধুলায় চূর্ণ যে পদপ্রান্তে
যারা বুনি ধান
গুণ টানি, আর তুলি হাতিয়ার, হাঁপর চালাই
সরল নায়ক আমরা জনতা সেই অনন্য।
ইটের মিনার
ভেঙেছে ভাঙুক! ভয় কি বন্ধু, দেখো একবার আমরা জাগরী
চার কোটি পরিবার।
(সূত্র: ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, বশির আল হেলাল)