Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 11:00 pm

সড়ক দুর্ঘটনায় সারা দেশে নিহত ৩৮

শেয়ার বিজ ডেস্ক: পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে ফিরতি যাত্রায় শুক্রবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত দেশের ৯ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এসব ঘটনায় আরও শতাধিত আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় বাস উল্টে ১৮ জন এবং রংপুর সদরে বিআরটিসি বাস-ট্রাকের ধাক্কায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাস খাদে পড়ে দুজন, সিরাজগঞ্জে ট্রাক ও বাসের সংঘর্ষে দুজন, নাটোরে ট্রাকচাপায় দুই অটোরিকশা আরোহী, গোপালগঞ্জে বাসচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী ও বাসচাপায় একজন; এছাড়া সাভারের আমিনবাজারে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে একজন, টাঙ্গাইলের সখীপুরে বাসের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী, লক্ষ্মীপুরে ট্রাক ও অটোরিকশার সংঘর্ষে দুজন এবং চুয়াডাঙ্গায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় এক পথচারী নিহত হয়েছেন।
তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের সবার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে কেউ কেউ ঈদের পর বাড়তি ছুটি কাটিয়ে রাতের বাসে কর্মস্থলে ফিরছিলেন। আবার কেউ চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলেন হাসপাতালে।
সবচেয়ে বড় হতাহতের ঘটনাটি ঘটে গাইবান্ধায়। জেলার পলাশবাড়ীতে রাস্তার পাশের গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে একটি বাস উল্টে অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৪০ জন। শনিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার ব্র্যাক মোড়ের কাছে বাঁশকাটা (গরুরহাট) এলাকায় রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকতারুজ্জামান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈলের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া আলম পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের বাঁ পাশে বড় একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। এতে বাসটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই সাতজন নিহত হন। পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর পর আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়।
তিনি জানান, আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে রংপুর ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের মধ্যে আটজনের মরদেহ শনিবার দুপুর নাগাদ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ আটজন হলেন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার এমদাদ আলী, গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ইউনুস আলী, নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মিনারুল খান, কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার মাসুদ রানা, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আবদুর রশিদ, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার জহিরুল ইসলাম, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রুবেল মিয়া ও দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার আখতারুল ইসলাম।
পুলিশের পক্ষ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, চালকের অসাবধানতা কিংবা ঘুমিয়ে পড়ার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। নিহতদের অধিকাংশই পেশায় গরু ব্যবসায়ী, পোশাক শ্রমিক ও বিভিন্ন পেশার শ্রমিক। দুর্ঘটনার কারণে শনিবার সকালে প্রায় দেড় ঘণ্টা রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। উদ্ধারকর্মীরা দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি সরিয়ে নেওয়ার পর সড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
এদিকে রংপুর সদর উপজেলার শলেয়াশাহ বাজারের কাছে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে ট্রাকের ধাক্কায় ছয়জন নিহত হন। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে এ দুর্ঘটনায় আরও ১৩ জন আহত হন বলে তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ হেল বাকি জানিয়েছেন।
তিনি জানান, দিনাজপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া বিআরটিসির ঈদ স্পেশাল দোতলা বাসটি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। শলেয়াশাহ বাজারের কাছে এসে বাসের একটি চাকা ফেটে যায়। চালক ও তার সহযোগী তখন রাস্তার পাশে বাস থামিয়ে চাকা বদলাচ্ছিলেন। বাসের কিছু যাত্রীও নেমে এসে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। এমন সময় বালুবাহী একটি ট্রাক এসে পেছন থেকে বিআরটিসির বাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ছয়জনের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট এসে আহতদের উদ্ধার করে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। নিহতরা সবাই ছিলেন বাসের আরোহী। তাদের মধ্যে নিশাত ও সাজ্জাদ নামে দুজনের পরিচয় জানা গেছে।
এছাড়া ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তুহিন পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে দুই যাত্রী নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় আহত হন আরও অন্তত ২০ জন। গোপালগঞ্জে সদর উপজেলার ঘোনাপাড়ায় গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়কে বাসচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী এনজিওকর্মী নিহত হন। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাকচালক ও হেলপারের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হন বাসের ১০ যাত্রী। নাটোর শহরে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে বালু বোঝাই একটি ট্রাকের ধাক্কায় দুই অটোরিকশা আরোহীর মৃত্যু হয়েছে।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বাসের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহীর প্রাণ গেছে। ঢাকায় সাভারের আমিনবাজার এলাকায় বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা সদরে একজন ও লক্ষ্মীপুরে দুজন নিহত হন।