হজযাত্রীদের সৌদির ইমিগ্রেশন ঢাকাতেই, আশ্বাস মন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক: সৌদি আরবে প্রবেশে যে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সারতে হয়, তা হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশেই সেরে ফেলার আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ। গতকাল ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে তার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, যারা হজে যাবেন, তারা যাতে সহজে ভিসা ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা এখানেই সম্পন্ন করে যেতে পারেন, যাতে হয়রানি কমানো যায়, সেই অনুরোধ তিনি রেখেছিলেন সৌদি মন্ত্রীর কাছে।  তিনি আমাকে বলেছেন, এ বছর তারা শতভাগ ক্লিয়ারেন্স বাংলাদেশেই করবেন, যাতে কোনো হয়রানি না হয়।

করোনা মহামারির কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর এ বছর বিদেশিদের জন্য হজ পালনের সুযোগ করে দেয়ার কথা জানিয়েছে সৌদি সরকার। ২০২০ সালে সৌদি আরবে থাকা ১০ হাজার এবং ২০২১ সালে ৬০ হাজার বিদেশি ও সৌদি নাগরিককে নিয়ে হজের আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়েছিল। মহামারিকালের আগে প্রতিবছর ২৫ লাখের মতো নারী-পুরুষ হজ পালন করতে সৌদি আরবে যেতেন, যাদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা থাকত এক লাখের বেশি। যেসব দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ হজ করতে যান, তারা বিশেষ ব্যবস্থায় সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া নিজেদের দেশেই করার বন্দোবস্ত করছে। ফলে ওইসব দেশের হজযাত্রীদের সৌদি আরবে পৌঁছে বিমানবন্দরে বসে থাকতে হয় না। অন্যদিকে বাংলাদেশ সেই ধরনের কোনো বন্দোবস্ত আগে না থাকায় জেদ্দায় পৌঁছানোর পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হতো।

হজযাত্রীদের সেই বিড়ম্বনার অবসানে সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের ঢাকায় এনে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্নের উদ্যোগ ২০১৯ সালে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই কার্যক্রমে তখন ব্যাঘাত ঘটে। ইমিগ্রেশনের ক্লিয়ারেন্স দেশ থেকে সম্পন্ন হলে বাংলাদেশি হাজিরা খুব খুশি হবেন বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

অপরদিকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশের সঙ্গে মিলে কাজ করার আগ্রহের কথা বলেছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি মনে করি, বলার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ভবিষ্যৎ অভীষ্টে পৌঁছানোর জন্য আমরা একে অপরের সঙ্গে খুবই সম্পৃক্ত। আমরা নিজেদের অঞ্চলের ও বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় এবং বহুপক্ষীয় মঞ্চে একযোগে কাজ করায় বিশ্বাসী। সংক্ষিপ্ত সফরে মঙ্গলবার ঢাকা পৌঁছান মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সফর শেষে বুধবার দুপুরে দেশের পথে রওনা হন তিনি। তার আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর সোনারগাঁও হোটেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করে দ্বিপক্ষীয় সভায় মিলিত হন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পৌনে ১১টায় শুরু হয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা চলে তাদের বৈঠক। পরে দুই দেশের পক্ষে দুটি চুক্তিতে সই করেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

কাস্টমস সহজীকরণ এবং বাংলাদেশের ফরেইন সার্ভিস অ্যাকাডেমি ও প্রিন্স সাউদ আল ফয়সাল ইনস্টিটিউট ফর ডিপ্লোম্যাটিক স্টাডিজের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে ওই চুক্তি দুটি হয়। পরে সাংবাদিকদের সামনে এসে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যৌথ পরামর্শ সভায় তাদের চমৎকার আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক নিয়ে তারা গর্বিত। এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়েও তার দেশ দারুণ আশাবাদী। আমাদের অংশীদারিত্বকে আরও বিস্তৃত কীভাবে করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি আমরা। ঐতিহাসিকভাবে আমাদের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে এবং ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক নিয়ে আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করছি। সৌদি আরবে বাংলাদেশের প্রায় ২৫ লাখ নাগরিকের কাজ করা এবং সেখানকার উন্নয়নযাত্রায় অবদান রাখার কথা উল্লেখ করেন প্রিন্স ফয়সাল। বাংলাদেশে সৌদি কোম্পানির বিনিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ নিয়ে কিছু সৌদি কোম্পানি এরই মধ্যে বাংলাদেশে কাজ করছে। বিনিয়োগের এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আমরা দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্বকে আরও বিস্তৃত করতে চাই। আমরা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের বিষয়ে খুবই আশাবাদী। আমরা দেখতে পাচ্ছি, আরও অনেক সৌদি কোম্পানি বাংলাদেশে আসতে চায় এবং দুই দেশের সহযোগিতার সম্ভাবনাকে সামনে রেখে আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করছি।’

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুই দেশের আরও অনেক কিছু করার আছে। এক্ষেত্রে কাজ করার জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে মতৈক্যে পৌঁছেছেন তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০