গতকালের পর
যেসব ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ থাকে না এবং চিকিৎসক যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, উচ্চ রক্তচাপের কারণে অঙ্গগুলোর ক্ষতি হয়নি বা হচ্ছে না, তবে ক্ষেত্রবিশেষে হাসপাতালে ভর্তি না করেও চিকিৎসা দিতে পারেন। তবে ওষুধ ব্যবহার করার কিছুদিন পরই আরেকবার চিকিৎসকের কাছে অবস্থা যাচাইয়ের জন্য যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থার লক্ষণগুলো সম্পর্কে রোগীকে সজাগ থাকতে বলা হয়, যাতে প্রয়োজনে রোগী যেকোনো সময় হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে।
৫ শতাংশ ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত ও খুব বেশি উচ্চ রক্তচাপের বিশেষ কোনো অন্তর্নিহিত কারণ থাকে। যেমন কিডনি রোগ, হরমোনজনিত রোগ, ব্যথানাশক ও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের প্রতিক্রিয়া, হৃদযন্ত্রের জন্মগত ত্রুটি, হরমোন নিঃসরণকারী টিউমার প্রভৃতি। কম বয়সে হঠাৎ খুব বেশি মাত্রার রক্তচাপ উঠে গেলে এসব কারণ অনুসন্ধান করা দরকার পড়ে। তার জন্য নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার হতে পারে।
গর্ভকালে অতিরিক্ত উচ্চ রক্তচাপ: গর্ভকালীন রক্তচাপ হঠাৎ খুব বেশি বেড়ে গেলে মা ও গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতার আশঙ্কা তৈরি হয়। এ সময় মায়ের পাসহ শরীর ফুলে যাওয়া, রক্তক্ষরণ, জন্ডিস ও খিঁচুনি হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের অনেক ওষুধ গর্ভকালীন ব্যবহার করা যায় না। তাই এ সময় চিকিৎসকের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। যাতে চিকিৎসক গর্ভকালীন এবং অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসা দিতে পারেন। এমনকি শেষের দিকে রক্তচাপ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া, প্রস্রাবে আমিষ নির্গমন, ঝাপসা দেখা বা খিঁচুনির মতো উপসর্গ হলে চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে জরুরি প্রসব বা অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
সচেতন থাকুন: হঠাৎ এই বিপদ এড়াতে রক্তচাপ বিষয়ে সচেতন থাকুন। যাদের রক্তচাপ আছে ও ওষুধ খান, তারা নিয়মিত বাড়িতে রক্তচাপ মাপবেন। অনিয়ন্ত্রিত মনে হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করতে হতে পারে।
যাদের রক্তচাপ নেই, কিন্তু ঝুঁকি আছেন, যেমন বয়স চল্লিশের বেশি, ওজন বেশি, পারিবারিক ইতিহাস আছে ইত্যাদি তারাও বছরে কয়েকবার রক্তচাপ পরিমাপসহ সব রুটিন পরীক্ষা করাবেন।
অতিরিক্ত লবণ ও লবণাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। ধূমপান বর্জন করুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন আর সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলুন। পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। তা না হলে ওষুধ সেবনের পরও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা মুশকিল। নিজে নিজে কখনও রক্তচাপের ওষুধ বন্ধ করবেন না বা কমাবেন না। [শেষ]
ডা. শরদিন্দু শেখর রায়
হƒদরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা