শোবিজ ডেস্ক: এই তো সেদিন টুইট করেছিলেন, ‘৩৫ বছর চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। প্রত্যেকে এমনকি স্পটবয়ও আমার ওপর আস্থা রাখে।’ এ টুইটের কিছুক্ষণ আগে লিখেছিলেন ‘নায়কসুলভ সুন্দর চেহারা আমার ছিল না।’ বাহ্যিক চেহারা নিয়ে তার ভেতরে কোনো আক্ষেপ ছিল কি না, জানা নেই আমাদের। তবে পর্দায় তার তেজোদীপ্ত পদচারণ, গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বর, অভিনয়ে আস্থা শুধু স্পটবয় কেন, ভূভারতের সবারই ছিল। শুধু অভিনয় নয়, প্রখর ব্যক্তিত্ব দিয়েও জয় করেছেন দর্শকদের হƒদয়। মাত্র ৬৬ বছর বয়সে তার প্রয়াণে সবাই শোকাহত। গতকাল সকালে মুম্বাইয়ে নিজ বাড়িতে হƒদস্পন্দন বন্ধ হয়ে পৃথিবীর মায়া কাটান ওম পুরি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ও সিনেমার শুটিং করেছেন।
মুখভর্তি বসন্তের দাগ তাকে আলাদা করে চেনাতে সহায়তা হয়তো করেছিল। সমান্তরাল ও আর্ট দুই ধারাতে ছিলেন সফল। ইতিবাচক ভূমিকায় যেমন মনে আঁচড় কেটেছেন, নেতিবাচক চরিত্রও সফলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। কাজ করেছেন সত্যজিৎ রায় থেকে শুরু করে রিচার্ড অ্যাটেনবরো, রোল্যান্ড জফের মতো বিখ্যাত পরিচালকদের সঙ্গে।
১৯৫০-এর ১৮ অক্টোবর এক পাঞ্জাবি পরিবারে জš§ নেন ওম পুরি। পৈতৃক ভিটা ছিল হরিয়ানার আম্বালায়। দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা বা এনএসডি থেকে অভিনয়ে শিক্ষা নিয়েছিলেন। তার সহপাঠী ছিলেন নাসিরউদ্দিন শাহ। স্নাতক হন পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট থেকে। তাদের সময়ে খুব কম মানুষ প্রথাগত শিক্ষা নিয়ে অভিনয়ে আসতেন।
১৯৭৬ সালে প্রথম বড় পর্দায় প্রবেশ করেন। মারাঠি ছবি ‘ঘাসিরাম কোতওয়াল’ ছিল তার অভিনীত প্রথম সিনেমা। এর চার বছর পর ১৯৮০ সালে ‘আক্রোশ’ ছবির জন্য ফিল্মফেয়ার সেরা সহ-অভিনেতার পুরস্কার পান। ১৯৮২ সালে ‘আরোহণ’র জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে পান জাতীয় পুরস্কার। পরের বছর আবারও সেরা অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার ওঠে তার হাতে। সিনেমাটির নাম ‘অর্ধ সত্য’।
শুধু হিন্দিই নয় পাঞ্জাবি, মালয়ালম, কন্নড়, তেলেগু, মারাঠি, উর্দু ভাষার সিনেমায়ও ছিল তার সরব উপস্থিতি। দেশের বাইরে পাকিস্তানি, ব্রিটিশ ও আমেরিকার বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন। সবখানেই তার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে।
অভিনয় করেছেন মির্চ মসালা, জেনেসিস, ধারভীর মতো আর্টফিল্মে। চায়না গেট, মালামাল উইকলি, হেরাফেরি, ডিস্কো ড্যান্সার, চাচী ৪২০, রং দে বাসান্তি, দাবাং, সিটি অব জয়, গান্ধী, দ্য রিলাকটেন্ট ফান্ডামেন্টালিস্ট প্রভৃতি ছবিতেও তার উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া। চলচ্চিত্রে অবদানস্বরূপ ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৯৩ সালে বিয়ে করেন সাংবাদিক নন্দিতা পুরিকে। স্বামীকে নিয়ে নন্দিতা পুরী লিখেছিলেন, আনলাইকি হিরো: দ্য স্টোরি অব ওম পুরি। তারা আলাদা হয়ে যান ২০১৩ সালে। ইশান নামে তাদের এক পুত্রসন্তান আছে।
মৃত্যু নিয়ে কখনওই ভীত ছিলেন না। বরং অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকা নিয়ে ছিল তার আতঙ্ক। ঘুমের মধ্যে তাই স্বাভাবিক মৃত্যুই হয়তো তার কাম্য ছিল। তবে তিনি বেঁচে রইবেন তার কাজের মধ্যে।
Add Comment