শেয়ার বিজ ডেস্ক : বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এবং বিএনপির আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশটা যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন হঠাৎ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সবার এত মাথাব্যথা কেন? সন্দেহ হয় রে, এটুকুই বলতে হয় সন্দেহ হয় রে! আসল হলো নির্বাচনটাকে বানচাল করে দেয়া।
গণভবনে গতকাল শুক্রবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের বিষয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। খবর: বাসস।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে বৈঠক এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার ও ওয়াশিংটনের আকাক্সক্ষা ছাড়া অন্য কিছু আছে কি নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, যারা জানে নির্বাচনে গেলে জনগণের ভোট পাবে না, তারা সব জায়গায় গিয়ে ধরনা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের তো কোটি কোটি টাকা। ক্ষমতায় থাকতে এত বেশি মানি লন্ডারিং করে এত বেশি টাকার মালিক হয়ে গেছে, তারা অবাধে সেই টাকা খরচ করে যাচ্ছে। এর সঙ্গে এটা প্রচার। তারা বাস্তব অবস্থাটা বোঝে কি না, আমি জানি না। দেখি তারা এই একই কথা বলে। ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েই যাচ্ছে। সেটা আমি স্পষ্ট বলে আসছি। কেন? ভোটের জন্য আমরা সংগ্রাম করলাম আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার অর্জন করে দিয়েছি। আজ আমাকে ভোটের অধিকার শেখাতে হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি খুব স্পষ্টÑসবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা এটাই মেনে চলি, সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। নির্বাচন নিয়ে একটু খুব বেশি কথা বলি, আমাদের দেশের কিছু লোক…। যারা নির্বাচন বয়কট করেছে, অথবা নির্বাচনকে সব সময় কলুষিত করেছে, অথবা ভোট চুরি করেছে, ভোট ডাকাতি করেছে, এখন তাদের কাছ থেকে শুনতে হয় অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা। দুর্ভাগ্য হলো সেটাই। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, ক্ষমতায় এসে জনগণের ভোট চুরি করে, ক্ষমতায় থেকে দেশ পরিচালনা করেছে, সেই সময় নির্বাচনের সু®ু¤তা নিয়ে যাদের উদ্বেগ দেখিনি। অথচ ২০০৮ সালে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলো, বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ২৯টা সিট। বিএনপি-জামায়াতের ২০ দলীয় জোট পেয়েছিল মোট ৩০টা সিট।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে তারা অগ্নিসন্ত্রাস-মানুষ হত্যাসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা করেনি। হরতাল-অবরোধ আমরা দেখলাম। ২০১৮ সালের নির্বাচনে যোগদান করে ৩০০ সিটে সাতশ’রও বেশি নমিনেশন দিয়ে নিজেরাই মারামারি করে ইলেকশন থেকে সরে গেল। ইলেকশনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করল। এখন তাদের মুখে আবার অবাধ, সু®ু¤ ও নিরেপক্ষ নির্বাচনের কথা শুনি এবং সব জায়গায় এটা প্রচার করে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা আমাদের দেশের নির্বাচন অবাধ, সু®ু¤ নিয়ে প্রশ্ন তোলে…। আমার প্রশ্নটা হলোÑযখন মিলিটারি ডিকটেটর ছিল, যখন আমরা সংগ্রাম করেছি জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য, যখন ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রম করেছি, সেøাগান দিয়েছি আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব এবং নির্বাচনের যে সংস্কারগুলো, ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন পাস করা, নির্বাচন কমিশনকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আলাদা করে বাজেট আলাদা করে দিয়ে আরও শক্তিশালী করা, জনগণের মাঝে ভোটের অধিকারের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং জনগণের যে ভোটের অধিকার ’৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেই জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেয়াÑএটা তো আওয়ামী লীগই করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের জোট আমরা সবাই এক হয়ে আন্দোলন করি, তার জন্য আমাদের বহু মানুষকে রক্ত দিতে হয়েছে। আমি সেই কথাটা বলেছি তাদের (যুক্তরাষ্ট্র)। আমাকে নির্বাচন অবাধ-নিরপেক্ষ শেখাতে হবে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার আদায় ও আন্দোলন-সংগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই আমরা করেছি। তারপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
নির্বাচন হয়েছে বলেই জনগণ বারবার ভোট দিয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল, ২০০১ থেকে ২০০৮ সালÑএই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, দেশকে কী উন্নতি দিয়েছে? মাত্র ভাতের ব্যবস্থা করতে পেরেছে? পারেনি, দুর্ভিক্ষ ছিল। সব সময় দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকত। মানুষ একবেলা খাবার জোটাতে পারত না। বিদেশ থেকে পুরান কাপড় এনে পড়াত। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টিহীনতা প্রতিনিয়ত ছিল। নারীর ক্ষমতায়ন ছিল না। এখন যতটুকু বাংলাদেশের মানুষ পাচ্ছে, সেটা আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পরেই এই উন্নতিটা হয়েছে। তাহলে এখন এত প্রশ্ন আসে কেনÑসেটাই আমার কথা।
তিনি বলেন, একটা দেশ এত দ্রুত উন্নতি করে ফেলছে, সেটাই সবার মাথাব্যথার কারণ হলো কিনা? এটাকে এখন কীভাবে নষ্ট করা যায়! সেই প্রচেষ্টা কিনা, এই শঙ্কাটা আমারও আছে। কারণ এই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষে নির্বাচনের কথা তো আমিই বলেছি। একসময় ছিল অব দ্য আর্মি, বাই দ্য আর্মি, ফর দ্য জেনারেল। এটা থেকে আমরা রেহাই দিয়েছি। আব্রাহাম লিংকনের অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল তো আমরা স্টাবলিস্ট করেছি। সব ধরনের অপকর্ম থেকে দেশের মানুষকে মুক্তি দিয়েছি।
আইয়ুব খান, জিয়াউর রহমান, এইচএম এরশাদ ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবই তো গোস টু। আওয়ামী লীগ আসার পর আওয়ামী লীগের তো ভোট চুরি করা লাগে না। আওয়ামী লীগকে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেয়। কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করি আমরা। দেশের মানুষ এখন জানে, নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছি, নৌকায় ভোট দিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তি পেয়েছি, নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। দারিদ্র বিমোচন এটা কাদের সময় হয়েছে? ৪১ ভাগ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। এটা এনজিও বা কারও মাধ্যমে তো হয়নি। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমেও হয়নি। বরং আমরা ক্ষুদ্র সঞ্চয় করাচ্ছি। আমাদের কর্মসূচি ক্ষুদ্র সঞ্চয়। দেশে হতদরিদ্র মাত্র পাঁচ শতাংশ, ওটুকুও থাকবে না। অন্তত দুই কাঠা জমি আর একটা বাড়ির মালিক তো সবাই থাকবে। তারপর যার যারটা নিজে করে খাবে। এই জায়গায় তো আমরা আনতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, কাজেই এটা তো একটা সন্দেহের ব্যাপার আছেই। তবে আমাদের মানুষ কতটুকু সচেতন, সেটা হলো কথা। কিছু লোক তো আছে, চোখ থাকতে অন্ধ, কান থাকতে বধির। তাদের তো আর কিছু করা যায় না।