ব্যারিস্টার উপনিবেশকাল থেকে চলে আসা উপমহাদেশের এক সম্মানজনক ডিগ্রি। ওকালতি পেশায় ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছা আছে, এমন অনেকেই চায় বার অ্যাট ল’ ডিগ্রি নিতে। জানতে চান ব্যারিস্টার হওয়ার প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত। কিভাবে হবেন ব্যারিস্টার, তা জানাচ্ছেন মুতাসিম বিল্লাহ নাসির
ব্যারিস্টার অ্যাট ল’র সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে বার অ্যাট ল’। আইন পেশায় যারা নিয়োজিত হতে চান, তাদের জন্য ইংল্যান্ড বার কাউন্সিলের একটি সম্মানজনক সনদ হচ্ছে বার অ্যাট ল’। ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের সাবেক শিক্ষক ব্যারিস্টার সাঈয়্যেদ হাসিনুল আবেদিন জানান, একজন ব্যারিস্টার হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার জন্য ৯ মাসের একটি বার ভোকেশনাল কোর্স (বিভিসি) করতে হয়, যার বর্তমান নাম বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স (বিপিটিসি) । এতে ১২টি নৈশভোজে অংশ নিতে হয়। কোর্স সফলভাবে শেষ করলে মেলে ইংল্যান্ড বার কাউন্সিলের সনদ।
দেশে বসেই ইংল্যান্ডের ডিগ্রি
ব্যারিস্টার সাঈয়্যেদ হাসিনুল আবেদিন জানান, আমাদের দেশে ভূঁইয়া একাডেমি, নিউ ক্যাসেল ল’ একাডেমি, লন্ডন কলেজ অব লিগ্যাল স্টাডিজ, ব্রিটিশ স্কুল অব ল’ এ চারটি টিউশন সার্ভিস প্রোভাইডার বার অ্যাট ল’ পড়ালেখার বিষয়ে সহযোগিতা করে। এসব প্রতিষ্ঠান ভর্তি, টিউশন ফি জমাসহ প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে সহযোগিতা করে। ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন আর ইউনিভার্সিটি অব নর্দামব্রিয়া মূলত এ দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে ব্রিটিশ ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ দেয়। তবে ঘরে বসে ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় বা স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে আইন বিষয়ে অনার্স করা গেলেও ৯ মাসের বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্সের জন্য ইংল্যান্ডে যেতেই হবে।
যোগ্যতা
ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ জানান, এইচএসসি বা সমমানের ডিগ্রিধারী যে কেউ ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃত তিন-চার বছর মেয়াদি এলএলবি অনার্স কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন। এক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি মিলে জিপিএ ৫ থাকতে হবে। বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্সে ভর্তির আবেদনের জন্য কোনো ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় বা তার অধিভুক্ত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণির এলএলবি (সম্মান) ডিগ্রি থাকতে হবে। আর ইংল্যান্ডের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য কোনো বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি থাকলে তাকে এক বছরের সিপিই কোর্স করার পর বার প্রফেশনাল কোর্সের জন্য আবেদন করা যাবে। তিনি আরও জানান, এ কোর্সে প্রতিবছরই পাঁচ হাজারের মতো আবেদন জমা পড়ে। শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যক্তিগত দক্ষতা, ভাষার দখল, সাংগঠনিক দক্ষতা এসব বিষয় বিবেচনায় এনে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করা হয়। সম্প্রতি আইইএলটিএস স্কোরও দেখা হচ্ছে। আবেদনের ক্ষেত্রে স্কোর ৭.৫ বাধ্যতামূলক হলেও অনেক ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়।
কোথায় পড়বেন
বার অ্যাট ল’ কোর্সটি ইংল্যান্ডের চারটি ইন’স-এর যে কোনো একটি থেকে করতে হয়। অর্থাৎ লিনকনস ইন, গ্রেইস ইন, ইনার টেম্পল ও মিডল টেম্পল এ চারটি ইন’স-এর মধ্যে যে কোনো একটি আপনাকে বেছে নিতে হবে। সনদ ইন থেকে দেওয়া হলেও কোনো একটি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়াশোনা করতে হয়। ইন’স অব কোর্ট, স্কুল অব ল’, কলেজ অব ল’, বিপিপি ল’ স্কুল, নটিংহ্যাম, নর্দামব্রিয়া, ব্রিস্টল, কার্ডিফ, ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন এ ৯টি প্রতিষ্ঠানে বার অ্যাট ল’ করা যায়। এর যে কোনো একটিতে পড়তে পারেন।
ভর্তি হবেন কখন
সাধারণত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বার অ্যাট ল’ কোর্সে ভর্তি করা হয়। এ কোর্সে অ্যাডভোকেসি, ক্লায়েন্ট কনফারেন্সিং, নেগোসিয়েশনসহ ১৩টি বিষয়ের ওপর পরীক্ষা দিতে হয় এবং সব বিষয়েই আলাদাভাবে পাস করতে হয়।
পরীক্ষা পদ্ধতি
শিক্ষার্থীরা ইংল্যান্ডের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে ও একই সময়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকেন। পরীক্ষা নেওয়া হয় ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে।
খরচ কেমন
ব্যারিস্টারি পড়া বেশ ব্যয়বহুল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভেদে টিউশন ফি কিছুটা কমবেশি হয়ে থাকে। বার ভোকেশনাল কোর্সের টিউশন ফি প্রতিবছর বাড়ছে। বার অ্যাট ল’ কোর্সটির মেয়াদ ৯ মাস হলেও এটি শেষ করতে এক বছর লেগে যায়। তাই এর টিউশন ফির সঙ্গে এক বছরের থাকা-খাওয়ার খরচ হিসাব করতে হবে। এ খরচ নির্ভর করে জীবনযাত্রার ওপর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভেদে বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্সের টিউশন ফি বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৫ লাখ ৪৬ হাজার থেকে ১৫ লাখ ৭৯ হাজার টাকা (১৪ হাজার ২০০ থেকে ১৪ হাজার ৫০০ পাউন্ড)। ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি (অনার্স) ডিগ্রিটা যদি ঘরে বসে নিতে চান, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি ও বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি বাবদ কমপক্ষে ১৯ থেকে ২০ লাখ টাকা লাগবে। ইংল্যান্ডে গিয়ে নিতে চাইলে শুধু টিউশন ফি বাবদ লাগবে ২৬ থেকে ৫৬ লাখ। থাকা-খাওয়া ও যাতায়াত খরচ মাসে কমপক্ষে ৪৪ থেকে ৬৫ হাজার টাকা (৪০০ থেকে ৬০০ পাউন্ড)। তাতে দেশে বসে নেওয়া একটা বার অ্যাট-ল’র ক্ষেত্রে খরচ পড়বে ৪০ থেকে ৪৪ লাখ টাকা।
আর ইংল্যান্ডে গিয়ে পড়তে চাইলে পড়বে ৬৩ লাখ থেকে এক কোটি টাকার মতো।
বিদেশে বার অ্যাট ল’ পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ রয়েছে। দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রছাত্রীরা নতুন নিয়মে সপ্তাহে ১০ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন। যদিও এ সময় পড়ার চাপে খণ্ডকালীন কাজ করা যায় না। এমনটিই বলেন ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ। তিনি জানান, বার অ্যাট ল’ করার সময় প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়। তাই সুযোগ থাকলেও খণ্ডকালীন কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে।