হয়রানি ছাড়া ব্যবসা করতে চান ব্যবসায়ীরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: ব্যবসায়ীদের সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম এনবিআরের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, ব্যবসায়ীরা হয়রানি ছাড়া ব্যবসা করতে চায়। হয়রানি বন্ধ করুন। তাহলে ব্যবসায়ীরা সঠিকভাবে ট্যাক্স ও ভ্যাট দেবে। বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অনেক এগিয়ে। হয়রানি না করলে ব্যবসায়ীরা এনবিআরের সঙ্গে সবসময় আছে।

গতকাল রোববার আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনের মাল্টিপারপাস হলে জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ, ২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের নেয়া পদক্ষেপ অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যতে ব্যবসা করতে পারবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। ১০ লাখ ইএফডি মেশিন দেয়ার কথা। সেখানে মাত্র ১৬ হাজার দেয়া হয়েছে। তবে এনবিআর চেয়ারম্যান আমাকে বলেছেন, ৫০ হাজার মেশিন ফ্রি দেয়া হচ্ছে। তবে মেশিনগুলো ব্যবসার খাত অনুযায়ী দেয়ার অনুরোধ করেন তিনি। তিনি বলেন, যদি স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের দেন, তাহলে সারাদেশে শুধু স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের দেন। অথবা মিষ্টি দোকান হলে শুধু তাদের দেন। সেক্টর অনুযায়ী হলে ভ্যাট কালেকশন করতে পারবেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ৭ হাজার টাকা থেকে আজ চার লাখ কোটি টাকার বাজেট হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে দেশ এক অনিশ্চয়তায় রয়েছে। আমরা বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছি। এই সমস্যা আর লড়াইয়ের মধ্য দিয়েও ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছেন। কাস্টমস ও ভ্যাটে অটোমেশন হলে ব্যবসায়ীরা কাক্সিক্ষত সুফল পাবেন। তাহলে সঠিকভাবে ভ্যাট ও ট্যাক্স দেবেন। ব্যবসায়ীরা ট্যাক্স ও ভ্যাট দিতে চান। কিন্তু যখনই সমস্যায় পড়েন, তখনই ব্যবসায়ীরা ট্যাক্স ও ভ্যাট থেকে দূরে চলে আসেন। আমরা এনবিআরকে করনেট বাড়াতে বলেছি। এখনও বলছি, করনেট বাড়াতে হবে। বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে, সেখান থেকে কর আদায় করতে পারেন।

এনবিআর যাতে ব্যবসায়ীদের হয়রানি না করে সেই অনুরোধ জানিয়ে সভাপতি বলেন, আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে খাতা নিয়ে যে সমস্যা। আমরা যে মেশিনারিজ দিয়ে ব্যবসা করি, সেসব নিয়ে টানাটানি যেন না করেন। আমরা যেন হয়রানির শিকার না হই। হয়রানি ছাড়া যাতে ব্যবসা করতে পারি সেই সুযোগ আমাদের দেন। আমরা ট্যাক্স ও ভ্যাট দিতে চাই। ব্যবসায়ীদের হয়রানি ছাড়া ট্যাক্স ও ভ্যাট দেবেন; সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। তাহলে আমরা কথা দিতে পারি, আমরা ট্যাক্স ও ভ্যাট দেবো। এফবিসিসিআই ও অন্যান্য চেম্বারকে নিয়ে একটা সভা করেন। যাতে সচেতনতা তৈরি হয়। আমার ভ্যাট আমি দেব, আমার ট্যাক্স আমি দেবÑএই মূলমন্ত্রে আমরা এনবিআরের সঙ্গে কাজ করব।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখন অনেক এগিয়ে। ব্যবসায়ীরা এখন পেছনের দিকে তাকাতে চায় না। আমরা অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি। এক বা দুই শতাংশ ব্যবসায়ী হয়তোবা তারা আয় গোপন করেন। আমরা কথা দিচ্ছি, এটা থেকেও আমরা বেরিয়ে আসব যদি অটোমেশন হয়।

অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতনামা শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএলের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী বলেছেন, এনবিআর ব্যবসায়ীদের ওপর আস্থা রাখলে রাজস্ব খাত এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা পরিমণ্ডলের যারা আছেন তারা ভ্যাট আদায়ে এনবিআরের চ্যালেঞ্জটা বুঝতে পেরেছেন। আমি মনে করি ভ্যাট বাড়বে। ভ্যাট বাড়ার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন হবে।’ এনবিআরকে ধন্যবাদ জানিয়ে আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘কঠিন হলেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের একটা কথা ভালো লেগেছে। তিনি বলেছেন, রপ্তানিতে আমরা যোগ্য বাজার খুঁজে নেবো। বাংলাদেশ যেভাবে পণ্য উৎপাদন করছে, আমরা এগিয়ে যাব। দেশ এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এনবিআরের চিন্তাভাবনায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের অর্থনীতি বড় হবে, একই সঙ্গে আমাদের ভ্যাট আদায়ও বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা যখন আমাদের ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিয়েছেন, অনেক খাতের ক্ষেত্রে সুযোগ দিয়েছেন। এগুলোতে আমরা বেনিফিশিয়ারি হয়েছি। সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পণ্য পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। আজ আপনারা অ্যাপ্লায়েন্সে (যন্ত্রপাতিতে) যে ছাড় দিয়েছেন, এই ছাড়ের জন্য বাংলাদেশে অ্যাপ্লায়েন্স শিল্প গড়ে উঠেছে।’

আহসান খান বলেন, ‘এনবিআর দেশকে যতটা ভালোবাসে, ব্যবসায়ীরাও দেশকে ততটা ভালোবাসেন। আমাদের আন্তরিক প্রয়াসে দেশ এগিয়ে যাবে। আপনারা যদি আমাদের ওপর আস্থা রাখেন তাহলে রাজস্ব খাত এগিয়ে যাবে। জিডিপি রেশিও নিয়ে আমাদের যে বদনাম আছে, মধ্যম ও উচ্চ আয়ের দেশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জিডিপি রেশিও বৃদ্ধি পাবে।’

এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আরও ভালো কাজ করেন। আমাদের আরও প্রণোদনা দেন। আমাদের প্রণোদনা দেবেন, আমরা এই প্রণোদনা অপচয় করব না। আমরা তা পুনরায় বিনিয়োগ করে দেশের কর্মসংস্থান বাড়াতে কাজ করব। ব্যবসায়ীরা এনবিআরের সব প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাবে।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনবিআর সদস্য (ভ্যাট নীতি) জাকিয়া সুলতানা। সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, এনবিআর সদস্য (মূসক নিরীক্ষা) ড. মো. সহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার। অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী নয়টি প্রতিষ্ঠানকে (উৎপাদন, সেবা ও ব্যবসায়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনটি করে) সম্মাননা দেয়া হয়।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০