নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ-পরবর্তী দফায় দফায় বিএনপির হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি চলছে। দলটির নেতাকর্মীরা কর্মসূচি বাস্তবায়নে নাশকতা ও হিংসাত্মক কর্মসূচি চালায়।
দেশব্যাপী হরতাল ও অবরোধে গত ২৯ অক্টোবর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত ২৭৫টি যানবাহন ভাঙচুর, ২৪টি স্থাপনা ভাঙচুর ও ১১টি অন্যান্য ভাঙচুরের ঘটনাসহ মোট ৩১০টি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ২৯০টি যানবাহন, ১৭টি স্থাপনা ও ৬৯টি অন্যান্য অগ্নিসংযোগের ঘটনাসহ মোট ৩৭৬টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া ২ নভেম্বর ঝালকাঠিতে আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর, ৫ নভেম্বর পিরোজপুর এবং ৬ ও ১৫ নভেম্বর সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুটি অফিসে দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা একেএম কামরুল আহছান বিষয়টি জানান।
উল্লেখযোগ্য ঘটনার বিষয়ে তিনি জানান, গত ১৯ নভেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের গিলাশ্বর আবদুল জব্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনশেড ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে বিদ্যালয়টির চারটি বেঞ্চ ও একটি জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গত ২৯ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনায় কর্তব্যরত অবস্থায় একজন পুলিশ সদস্যসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন।
অবরোধ চলাকালে ৩১ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত রেলওয়েতে ২৪টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কমলাপুর রেলস্টেশন, টাঙ্গাইল ও জামালপুরে তিনটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা মহানগরে একটি, ময়মনসিংহে দুটি, গাজীপুরে একটি, নেত্রকোনায় একটি, নওগাঁয় একটিসহ ছয়টি ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। কিশোরগঞ্জে একটি, নোয়াখালীতে দুটি, সিলেটে একটি, পাবনায় একটি, দিনাজপুরে একটি ও গাজীপুরে তিনটিসহ রেললাইনে ৯টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া সিলেট, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জে রেললাইন কেটে ফেলার চেষ্টার তিনটি এবং গাইবান্ধায় রেললাইনের ফিস প্লেট খোলার চেষ্টার ঘটনা ঘটে। পাবনায় ট্রেনে পেট্রল ও ডিজেলভর্তি বোতল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে রেললাইনের ওপরে অতিরিক্ত তিন ফুট লম্বা তিন ইঞ্চি চওড়া পাত সংযোজন করে নাশকতার চেষ্টা করা হয়।
গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে রমনায় দুজন, বংশালে দুজন, মুগদায় চারজন, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে দুজন, মোহাম্মদপুরে একজন, পল্লবীতে আটজন , কাফরুলে একজন, গুলশানে পাঁচজন ক্যান্টনমেন্টে একজন, খিলক্ষেতে দুজন ও উত্তরা পূর্ব থানায় একজন।
এছাড়া ২৮ অক্টোবর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লা জেলায় অবরোধ ও হরতালের সময় পিকেটিং ও অগ্নিসংযোগ করাকালে ছয়টি ঘটনায় ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একজন ও পিকেটিং করাকালে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের অনেকেই নিজেদের সম্পৃক্ততা উল্লেখ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
পুলিশকে বিতর্কিত করতে নাশকতাকারীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘প্রেস’ লেখা জ্যাকেট পরে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালানো হয়েছে। এ অবস্থায় ভাঙচুর ও নাশকতামূলক হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বাংলাদেশ পুলিশ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এ কর্মকর্তা জানান, অবরোধ-হরতালে পরিবহন বা স্থাপনা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগকারীদের উপযুক্ত প্রমাণসহ ধরিয়ে দিলে অথবা সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও জানান তিনি।