কৃষি বিষয়ে কৃষক ও সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কাজ। এজন্য তারা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়ে থাকে। এবার নিজেদের অফিসের ছাদে বাগান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে তারা। স্থান ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিস। এ কাজটির কৃতিত্ব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরশেদ আলী চৌধুরীর।
অফিস ছুটির পর অবসরটুকু কাজে লাগিয়ে সহকর্মীদের নিয়ে তিনি শুরু করেছেন এ কর্মযজ্ঞ। এই ছাদবাগান দেখতে স্থানীয়রা ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেক কৃষক, উৎসাহী জনতা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আর বেকার যুুুবকরা। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ছাদবাগানটি রোলমডেলে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন ওই অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরশেদ আলী চৌধুরী জানান, কৃষকদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী প্লটের মতো আয়োজন করতে পারলে ছাদকৃষি সম্পর্কে কৃষকদের ধারণা দেওয়া যাবে। ছাদকৃষির সম্প্রসারণ, পতিত ছাদে স্বাস্থ্যসম্মত সবজি, ফল, ফুল ও ঔষধি গাছ উৎপাদন করে পরিবারের প্রতিদিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব। বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ করা যায়। পরিবেশ সংরক্ষণের পাশপাশি ছাদকৃষি সম্পর্কে কৃষকদের বাস্তবসম্মত ধারণা দেওয়াই তাদের লক্ষ্য বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনিশঙ্কর বিশ্বাসসহ সহকর্মীদের নিয়ে তিনি পুরোনো ও অব্যবহƒত প্লাস্টিক এবং লোহার ড্রাম, বালতি প্রভৃতি দিয়ে তৈরি করেছেন ট্রে। আর সেগুলো টব হিসেবে স্থাপন করেছেন ছাদে। পুঁইশাক, পালংশাক, বেগুন, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, ক্যাপসিকাম, শসা, মরিচ ও লেটুসপাতাসহ বেশ কয়েক ধরনের সবজি চাষ করেছেন। মিষ্টি কামরাঙ্গা, পোয়ারা, ড্রাগন, বারিমাল্টা-৫, আপেল কুল ও বারোমাসি আমসহ কয়েকটি ফলের গাছ লাগিয়েছেন। শোভা বর্ধনের জন্য চাষ করেছেন গোলাপ-গাঁদাসহ কয়েকটি ফুল ও তুলসি গাছ।
ছাদবাগান পরিদর্শনের সময় ওই অফিসে কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ নিতে আসা কৃষক ইদ্রিস আলী ও সাফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানালেন, তারা উদ্বুদ্ধ হয়ে ইতোমধ্যে তাদের বাড়িতে ছাদবাগান শুরু করেছেন। আলাপকালে আরও কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী কৃষক জানালেন, আসলে পতিত জমি ও ছাদে বাগান করে পরিবারের সবজি ও ফলমূলের চাহিদা পূরণ করা যে সম্ভব, তারা সেটি স্বচক্ষে দেখেছেন, বিশ্বাস করেছেন। বাড়িতে তারা সাধ্যমত এটি করবেন বলে জানিয়েছেন।
হরিণাকুণ্ডুর শিশুকলি হাইস্কুলসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি কর্মচারীসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি তাদের ছাদবাগান দেখে নিজেরা স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান বা বাড়িতে বাগান তৈরি করেছেন। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ২০ উৎসাহী কৃষককে ছাদবাগানের জন্য বীজ ও চারা দিয়েছেন তারা। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় দেশের বিভিন্ন কৃষি অফিস ও অন্য অফিস ছাদবাগান করতে উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান চৌধুরী।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানালেন, উপজেলা কৃষি অফিসের ছাদবাগান একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এটি একদিকে যেমন পরিবারের সবজি ও ফলমূলের চাহিদা আর পুষ্টি পূরণ করবে, অন্যদিকে পরিবেশ সুরক্ষা ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতেও ভূমিকা রাখবে।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক জিএম আবদুর রউফ বলেন, তার অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক গোলাম মারুফ ও অতিরিক্ত পরিচালক চণ্ডিদাস কুণ্ডুসহ ওই অধিদফতর এবং জেলা প্রশাসনসহ বেশ কয়েকজন সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হরিণাকুণ্ডুর কৃষি বিভাগের ছাদবাগান ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরশেদ আলী চৌধুরীর মতো কর্মকর্তারা কৃষিক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন বলে জানান উপপরিচালক।
দেলোয়ার কবীর