হাইকোর্টের রুল: ‘শ্রমবিধি অনুসারে আলুর বস্তার ওজন নির্ধারণ কেন নয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বিভিন্ন হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলুর বস্তার অস্বাভাবিক ওজন নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে এ-সংক্রান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে ‘শ্রম বিধিমালা-২০১৫ এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়া কেন অবৈধ হবে না এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আইন বাস্তবায়নে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না’ তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও মোহাম্মদ সলিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর পবা উপজেলা লোড-আনলোড কুলি শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে একটি রিট আবেদন করা হয়। গতকাল এ আবেদনের শুনানি শেষে রুল দেন আদালত। আবেদনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার সুহান খান। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।

রুলের বিষয়ে ব্যারিস্টার সুহান খান বলেন, ‘শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, শ্রম পরিদফতরের পরিচালক, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে রুলের কপি পাওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে নির্দেশনার জবাব দিতে বলেছেন হাইকোর্ট। আগামী ৬ মার্চ এ বিষয়ে আবার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।’

এ প্রসঙ্গে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেজর (অব.) মো. জসীম উদ্দীন বলেন, ‘আমরা হাইকোর্টের নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা এ নির্দেশনা দেশের সব হিমাগার মালিকের কাছে পৌঁছে দিয়ে তাদের নির্দেশনা মেনে ৫০ কেজির বস্তায় আলু সংরক্ষণের অনুরোধ জানাব।’

উল্লেখ্য, গত ২১ নভেম্বর শেয়ার  বিজে হিমাগারে কর্মরত শ্রমিকদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমপরিবেশ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে হিমাগার শ্রমিকরা: আলুর বস্তার ওজনসীমা ৫০ কেজি নির্ধারণের দাবি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিভিন্ন হিমাগারে আলুর বস্তার অস্বাভাবিক ওজন এবং তার কারণে শ্রমিকদের নানা সমস্যার কথা উঠে আসে।

এতে বলা হয়, দেশে চার শতাধিক হিমাগারে প্রায় ৫২ লাখ টন আলু ধারণক্ষমতা রয়েছে। এসব আলু বস্তায় করে শেড থেকে প্রি-কুলিং চেম্বার ও চেম্বারের বিভিন্ন তলার কাঠের বা আরসিসির মাচায় তোলা শ্রমিকদের জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। এতে অনেক শ্রমিক শ্বাসকষ্ট, মেরুদণ্ডের ক্ষয়, পাইলস, চর্মরোগসহ নানাবিধ রোগে ভোগেন। অনেকে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।

অভিযোগের শুনানিতে বলা হয়, বাংলাদেশ শ্রম আইনে-২০০৬ বলা আছে, কোনো শ্রমিকের ক্ষতি হতে পারে এমন ভারী জিনিস উত্তোলন, বহন অথবা নাড়াচাড়া করতে দেওয়া যাবে না। এছাড়া শ্রম বিধিমালা-২০১৫ অনুসারে সাহায্য ছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে সর্বোচ্চ ৫০ কেজি এবং নারীকে সর্বোচ্চ ৩০ কেজির বেশি ওজন বহন করতে দেওয়া যাবে না।

কিন্তু দেশের হিমাগারগুলোয় ৮০ থেকে ১২০ কোজি ওজনের বস্তা শ্রমিকদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে শারীরিকভাবে জখম ও কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন অনেকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মারা যাওয়ার নজিরও রয়েছে। এ বিষয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএস) কাছে আবেদন করা হলেও তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়। পরে গত জানুয়ারি মাসে শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে আবেদন করা হয়।

কিন্তু ওইসব কর্তৃপক্ষ চিঠির কোনো জবাব বা কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে হিমাগার শিল্পে কর্মরত শ্রমিকের জীবন ও কর্মের নিরাপত্তার স্বার্থে পবা উপজেলা লোড-আনলোড কুলি শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০