Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 6:05 pm

হাইব্রিড বোরো ধান আবাদে ব্যস্ত নরসিংদীর কৃষকরা

প্রীতিরঞ্জন সাহা, নরসিংদী : নরসিংদীতে প্রতি বছরই বোরো ধানের আবাদ হয়। এবছরও জেলায় বোরোর আবাদ চলমান রয়েছে। তবে ধানের আবাদ খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশী জাতের ধানে লোকসানের কারণে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের বোরো ধানের আবাদ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চলতি বছর আবাদী বোরো ধানের ৯৮ ভাগ ধানই উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যাহা চলমান রয়েছে।

নরসিংদী জেলার সদর উপজেলা, শিবপুর, মনোহরদী, বেলাব, পলাশ ও রায়পুরা উপজেলাসহ ৬টি উপজেলাতেই চলতি বছর ব্যাপকভাবে উচ্চফলনশীল (উপসি) ও হাইব্রিড জাতের বোরো ধানের আবাদ চলমান রয়েছে। যা মোট আবাদী বোরো ধানের ৯৮ ভাগ। দেশীয় উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদে একই খরচ হলেও দেশী ধানে ফলন কম হওয়ায় চাষীরা চরম লোকসানে পড়েন। আর উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড ধান আবাদ করে দেশী ধানের দ্বিগুনেরও বেশী ফলন পাওয়া যায় বলে এ ধানের আবাদ ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

এক বিঘা দেশী ধানের জমি থেকে ১০/১২ মন ফলন হলেও উপশী ধানে ২৫ থেকে ৩০ মন পর্যন্ত ফলন হওয়ায় এ ধান আবাদে চাষীদের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। এছাড়া খাদ্য ঘাটতি কমাতে চাষীদের উপশী জাতের ধানের বীজ সহায়তা দিয়েছেন সরকার। সার, বীজ, কীটনাশক চাষাবাদ, চালের মূূল্য বৃদ্ধি ও দিনমুজুরের অত্যাধিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশী ধান আবাদ করলে চরম লোকসানে পড়তে হয় চাষীদের। তাই লোকসান কমাতে উপশী ও হাইব্রিড জাতের এ ধান চাষ করছেন ব্যাপকভাবে।

চলতি বছর নরসিংদী জেলায় ৫৬ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ৫১ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে উপশী এবং ৫ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার রোপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

নরসিংদী জেলা সদরের আমদিয়া ইউনিয়নের ধানচাষী আবুল মিয়া জানান, তিনি আগে দেশী জাতের ধানের আবাদ বেশী করতেন। তবে গত দুই বছরে সার, কীটনাশক, বীজ, তেল ও দিনমুজুরসহ ধান আবাদে সব ধরনের সরঞ্জাম অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় এবং দেশী ধান আবাদে লোকসানের কারণে দেশী ধানের আবাদ বাদ দিয়েছেন। এ ধানের চাইতে উপশী ও হাইব্রিড ধান আবাদে দ্বিগুনেরও বেশী ফলন পাওয়া যায় এবং আবাদ খরচ একই হওয়ায় এখন উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ধান আবাদ করছেন তিনি। একই এলাকার আবু মুন্সি জানান, তিনি এ বছর বেশ কয়েকবিঘা উপশী ও হাইব্রিড ধান আবাদ করেছেন। একবিঘা জমির আবাদ খরচ আগের চাইতে বেড়ে ৫/৬হাজার টাকা বেশী লাগছে। দেশী ধান আবাদ করলে আবাদ খরচই উঠে না। তাই তিনি উপশী বোরো ধান আবাদ করেছেন সব জমিতে। তার মতে অন্যান্য চাষীরাও এসব উচ্চ ফলনশীল জাতের বোরো ধান আবাদে ব্যস্ত রয়েছেন।

এ ব্যাপারে রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের রহিমাবাদ গ্রামের কৃষক হারিছুল হক জানান, ইরি বোরো আবাদ করার জন্য জমি প্রস্তত করছি। কিন্তু বিদ্যুৎ ও সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বোরো চাষে এবার খরচ বেশী হবে। তাছাড়াও সেচ মেশিন মালিকরা গতবারের চেয়ে অতিরিক্ত ৭০০/৮০০ টাকা বেশী দাবী করেছেন।

তিনি আরো জানান, একবিঘা জমিতে চাষ করতে বর্তমানে ট্রাক্টর খরচ-১৮০০ টাকা, চারা বাবদ-২০০০, সার ফসফিট-৮০০, চারা রোপণ বাবদ লেবার খরচ ৪০০০ টাকা, পানি সেচ ৩৫০০ টাকা, ধান রোপনের ১৪ দিন পর পূনরায় সার-কীটনাশক বাবদ ৬০০ টাকা, লেবার খরচ ১৫০০ টাকা এবং পরিশেষে ধান কাটাবাবদ লেবার খরচ ৫০০০ টাকাসহ মোট খরচ হয় ১৯ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু গত বছর একই জমি চাষ করতে খরচ লেগেছে ১৪ হাজার টাকা।

নরসিংদী কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ সাইদুর রহমান জানান, চলতি বছর জেলার ৬টি উপজেলায় ৫৬ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৮ শতাংশ উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড৯০ ও ৯২ জাতের।