নিজস্ব প্রতিবেদক: হাওরে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও কর্তব্যে অবহেলায় যথাসময়ে কাজ শেষ করেননি ঠিকাদাররা। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় গতকাল রোববার সুনামগঞ্জ সদর থানায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারসহ ৬১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, আসামিদের তালিকায় সিলেট বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ও সুনামগঞ্জ জেলা পাউবো কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে। আসামিদের মধ্যে সুনামগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরখাস্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দিনসহ দুজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। অন্য আসামিদের ধরার প্রক্রিয়া চলছে। আসামিরা হলেনÑসিলেট পাউবো সার্কেলের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলাম সরকার, সিলেট উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল হাই, সুনামগঞ্জ পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী খলিলুর রহমান, সেকশন কর্মকর্তা মো. শহিদুল্লাহ, ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ খান, খন্দকার আলী রেজা, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. শাহ আলম, মো. বরকত উল্লাহ ভূঁইয়া, মো. মাহমুদুল করিম, মো. মোছাদ্দেক, সজীব পাল ও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
৪৬ ঠিকাদার হলেনÑটাঙ্গাইলের গুডম্যান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আফজালুর রহমান, ফরিদপুরের মেসার্স খন্দকার শাহিন আহমেদের স্বত্বাধিকারী খন্দকার শাহিন আহমেদ, সিলেটের মাহিন কনস্ট্রাকশনের মো. জিল্লুর রহমান, সিলেটের মেসার্স সজীব রঞ্জন দাসের সজীব রঞ্জন দাস, সুনামগঞ্জের মেসার্স এলএন কনস্ট্রাকশনের পার্থ সারথী পুরকায়স্থ, সিলেটের মেসার্স হান্নান এন্টারপ্রাইজের হান্নান আহমেদ, সুনামগঞ্জের মেসার্স কামাল হোসেনের কামাল হোসেন, কাজী নাছিমুদ্দিনের নাছিমুদ্দিন, সাতক্ষীরার খন্দকার আলী হায়দারের খন্দকার আলী হায়দার, মৌলভীবাজারের মেসার্স আকবর আলীর মো. আকবর আলী, খুলনার আমিন অ্যান্ড কোং-এর মো. রবিউল আলম, ঢাকার মেসার্স বোনাস ইন্টারন্যাশনালের মো. আবুল হোসেন, সুনামগঞ্জের মেসার্স বসু নির্মাণ সংস্থার শিবব্রত বসু ও মেসার্স হাছান এন্টারপ্রাইজের মোজাম্মেল হক মুন, ঢাকার মেসার্স ইব্রাহিম ট্রেডার্স অ্যান্ড মো. শামিম আহসানের মো. বাচ্চু মিয়া, সুনামগঞ্জের মেসার্স মালতী এন্টারপ্রাইজের বিপ্রেশ তালুকদার বাপ্পি, সিলেটের মেসার্স মো. জামিল ইকবালের মো. জামিল ইকবাল ও মেসার্স নিম্মি অ্যান্ড মুমুর চিš§য় কান্তি দাস, ঢাকার মেসার্স নিয়াজ ট্রেডার্সের নিয়াজ আহমেদ খান, সুনামগঞ্জের মেসার্স প্রীতি এন্টারপ্রাইজের মিলন কান্তি দে, কুষ্টিয়ার মেসার্স আরআর ট্রেডিংয়ের খান মো. ওয়াহিদ রনি, সুনামগঞ্জের মেসার্স শোয়েব এন্টারপ্রাইজের মো. শোয়েব আহমেদ, চট্টগ্রামের মেসার্স ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্সের মো. ইউনুস, হবিগঞ্জের মো. আবদুল কাইয়ুমের মো. আবদুল কাইয়ুম, সুনামগঞ্জের আতিকুর রহমানের মো. আতিকুর রহমান, রাজশাহীর গোলাম সরোয়ারের মো. গোলাম সরোয়ার, মৌলভীবাজারের মো. কামরুজ্জামান কনস্ট্রাকশন কোং লি. এর মো. খাইরুজ্জামান, কুষ্টিয়ার মো. মফিজুল হকের মো. মফিজুল হক, ঢাকার মোখলেছুর রহমান প্রা. লি. এর মো. মোখলেছুর রহমান, সুনামগঞ্জের নুরুল হকের মো. নুরুল হক, সুনামগঞ্জের মেসার্স রেণু মিয়ার মো. রেণু মিয়া, চুয়াডাঙ্গার মো. শাহরিন হক মালিকের মো. শাহরিন হক মালিক, সিলেটের মো. শামসুর রহমানের মো. শামসুর রহমান, কুমিল্লার মেসার্স মিম কনস্ট্রাকশনের আবদুল মান্নান, সিলেটের মোকসুদ আহমেদের মোকসুদ আহমেদ, ঢাকার নুনা ট্রেডার্সের মো. সাইদুল হক, সিলেটের মেসার্স রাজেন কনস্ট্রাকশনের মো. মাহতাব চৌধুরী, ঢাকার এসএ-এসআই প্রা. লি. এর কাজী হাসিনা আফরোজ, সাতক্ষীরার শেখ আশরাফ উদ্দিনের শেখ আশরাফ উদ্দিন, চট্টগ্রামের সোহেল কনস্ট্রাকশনের লুৎফুল করিম, কুমিল্লার সৈকত কনস্ট্রাকশনের হাজী মো. কেফায়েতুল্লা, ঢাকার টেকবি ইন্টারন্যাশনালের হুমায়ন কবির ও ঠিকাদারের সহযোগী মো. ইকবাল মাহমুদ।
গত মার্চের শেষদিকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকা তলিয়ে যায়। দুর্বল ও অসমাপ্ত বাঁধ ভেঙে প্লাবন এবং ফসলহানির পেছনে বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের দুর্নীতিকে দায়ী করে ঢাকায় মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশও হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী হাওরাঞ্চলের ছয় জেলায় মোট দুই লাখ ১৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ক্ষতির শিকার হয় আট লাখ ৫০ হাজার ৮৮টি পরিবার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩০ এপ্রিল সুনামগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, বাঁধ নির্মাণে কারও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ প্রেক্ষাপটে হাওর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু করে দুদক। দুদক পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। তারা ওই এলাকায় গিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
তদন্ত চলার মধ্যেই সিলেটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম সরকার, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) মো. আবদুল হাই এবং সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফসার উদ্দীনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
গত ৪ মে পাউবো মহাপরিচালকসহ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর দুদক মহাপরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী বলেন, হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই সংস্থার প্রচণ্ড গাফিলতির প্রমাণ তারা পেয়েছেন।