শেয়ার বিজ ডেস্ক: হাওরের হাজার কোটি টাকার ফসলহানির ঘটনায় মামলা করেছে সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামালসহ ১৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সুনামগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে এ মামলাটি দায়ের করেন সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৫ কর্মকর্তা, ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের ৪৬ জন ঠিকাদার এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) ৭৮ জনকেও আসামি করা হয়েছে। ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি এবং সুনামগঞ্জবাসীকে নিয়ে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে এ মামলা দায়ের করেন বাদী।
এদিকে আদালতের বিচারক সুনামগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ মুজিবুর রহমান মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য দুদকে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে হাওরের হাজার কোটি টাকার ফসলহানির ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে দুদকে। গত ২ জুলাই হাওরে ফসলহানির ঘটনায় সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় পাউবোর ১৫ কর্মকর্তা ও ৪৬ জন ঠিকাদারকে আসামি করে দুর্নীতির অভিযোগে একটি মামলা করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ফারুক আহমদ। ওই মামলায় পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন ও বাঁধের কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইব্রাহিম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী বাচ্চু মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। তারা এখন কারাগারে আছেন।
দুদকের মামলায় পাউবো কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, ঠিকাদারদের সঙ্গে অবৈধ যোগসাজশের অভিযোগ আনা হয়। ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে ঠিক সময়ে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ না করে কৃষকদের ক্ষতি সাধনের অভিযোগ।
গতকালের মামলার বাদী আবদুল হক বলেন, আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বার্থে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলার আসামির তালিকায় ১৪০ নম্বরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে রাখা হয়েছে।
বাদী মামলায় আরও উল্লেখ করেন, ত্রাণ সচিব ফসলহানির ঘটনার সময় ১৯ এপ্রিল সুনামগঞ্জে আসেন। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় তিনি বলেন, ‘দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নামে একটা আইন আছে। এ আইনের ২২ ধারায় বলা আছে, কোনো এলাকার অর্ধেকের ওপরে জনসংখ্যা মারা গেলে ওই এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে হয়। না জেনে যারা এমন সস্তা দাবি জানায় তাদের কোনো প্রকার জ্ঞানই নেই।’ ত্রাণ সচিব অবজ্ঞার সুরে আরও বলেন, ‘কিসের দুর্গত এলাকা, একটি ছাগলও তো মারা যায়নি’।
জানা গেছে, হাওরে ফসলহানির পর গত ১১ এপ্রিল জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যরা দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য সমিতির পক্ষ থেকে একটি কমিটিও করা হয়। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেন তারা। পরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
সুনামগঞ্জে গত এপ্রিল মাসের পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে ১৫৪টি হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে যায়। ২৭ মার্চ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত সুনামগঞ্জে এ ফসলহানি ঘটে। এতে তিন লাখ ২৫ হাজার ৯৯০ জন কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হন। হাওরে ফসলহানির পর ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।