Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 7:07 pm

হাছান মাহমুদের কারণে লোকসান ৬০০ কোটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদের মালিকানাধীন বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিসেসের কাছ থেকে একটি কনটেইনার জাহাজ ও ফিশিং ট্রলার বানানোর কার্যাদেশ নিয়ে বিপাকে পড়ে এফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেড। এ কাজ করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি, আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এর মধ্যে জাহাজ বানানোর পাওনা প্রায় ৮০ কোটি টাকা। আর জালিয়াতির মাধ্যমে ছাপিয়ে দেয়া ন্যাশনাল ব্যাংকের ৬৮ কোটি টাকা এবং ব্যবসায়িকভাবে চরমভাবে হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি দাবি করেছেন এফএমসি ডকইয়ার্ডের চেয়ারম্যান ইয়াসিন চৌধুরী। আর পাওনা পরিশোধের জন্য আইনগত নোটিশ দিয়েছেন।

জানা যায়, ২০০৬ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর পশ্চিম গোমদণ্ডিতে কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে প্রায় ৬৫ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এফএমসি ডকইয়ার্ড। অত্যাধুনিক এলটিসি ভ্যাসেল, টিসিভি ভ্যাসেল, অত্যাধুনিক মাল্টিপারপাস ভ্যাসেল, ব্যারাক বার্জ, সার্ভে ভ্যাসেল, কনটেইনার শিপ, অয়েল ট্যাংকার, যাত্রীবাহী জাহাজ, ফিশিং ট্রলার, ড্রেজার নির্মাণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জলযান নির্মাণে অনেক কার্যাদেশ পাওয়ায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের মালিকানাধীন বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিসের কাছ থেকে একটি কনটেইনার জাহাজ ও ফিশিং ট্রলার বানানোর কার্যাদেশ পায় এফএমসি ডকইয়ার্ড। এ কাজ করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি, আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এর মধ্যে জাহাজ বানানোর পাওনা প্রায় ৮০ কোটি টাকা। আর জালিয়াতির মাধ্যমে চাপিয়ে দেয়া ন্যাশনাল ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় ৬৮ কোটি টাকা ছাপিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া ঋণের বিপরীতে থাকা জাহাজ বন্ধকীতে থাকা সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয়।

অপরদিকে হাছান মাহমুদ ও তার সহযোগীদের কর্মকাণ্ডে এফএমসি ডকইয়ার্ডের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। এমনকি এফএমসি ডকইয়ার্ডের ইয়াসিন চৌধুরীকে দেশ ছাড়তে হয়। এসব কারণে এফএমসি গ্রুপ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহযোগিতা না পেয়ে মূলধন সংকটে পড়ে। ব্যবসায় স্থবিরতায় বিপুল পরিমাণে ব্যাংক ঋণ বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে হাছান মাহমুদের কারণে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি দাবি করেছেন ইয়াসিন চৌধুরী। আর পাওনা পরিশোধের জন্য আইনগত নোটিশ দিয়েছেন।
এফএমসি ডকইয়ার্ডে কর্মরত ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলেন, আমাদের ডকইয়ার্ডে আগের মতো তেমন কাজ নেই; যা কাজ আছে তাও গতিশীল না। মূলধন সংকটে আছে। এছাড়া এফএমসি গ্রুপের অন্যান্য ব্যবসায় স্থবিরতা চলছে। এর মধ্যে এফএমসি পেইন্ট অ্যান্ড কেমিকেল ইন্ডাাস্ট্রিজ লিমিটেডও বন্ধ হয়ে আছে। এ কোম্পানিও নাকি বিক্রির জন্য চেষ্টা চলছে। এছাড়া এফএমসি স্পোর্টস ক্লাব দুবাইভিত্তিক আন্তর্জাতিক টি টেন ক্রিকেট লিগ ‘আবুধাবী টি ১০’ লিগে ইয়াছিন চৌধুরীর মালিকানাধীন বাংলাদেশের একমাত্র ফ্রাঞ্চাইজি টিম ‘বাংলা টাইগার্স’। এ খেলায় ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর অংশগ্রহণ করে আসছে। তারও দেশের ব্যবসায় মনোযোগ নেই।

ন্যাশনাল ব্যাংক সূত্র জানায়, এফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেডের ২০২৩ সাল শেষে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬১০ কোটি ৭২ লাখ টাকা। যা ২০২০ সালে ছিল ১ হাজার ২১৭ কোটি টাকা, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৩০ কোটি এবং ৮৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার বছর ব্যবধানে ঋণ বাড়ল ৫৮০ কোটি টাকা।
এফএমসি ডকইয়ার্ডের চেয়ারম্যান ইয়াছিন চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা বিভিন্ন ধরনের জলযান নির্মাণ করি। আমাদের এফএমসি ডকইয়ার্ডে ২০১২ সালে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের মালিকানাধীন বিসমিল্লাহ মেরিনের কাছ থেকে একটি কনটেইনার জাহাজ ও ফিশিং ট্রলার বানানোর কার্যাদেশ দেয়। কিন্তু এ কাজ করতে গিয়ে গত ১২ বছর বিভিন্নভাবে হয়রানি, আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

এর মধ্যে জাহাজ নির্মাণের বকেয়া পাওনা প্রায় ৮০ কোটি টাকা। এছাড়া জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংকের দিলকুশা শাখার কিছু অসাধু কর্মকর্তার মাধ্যমে ৬৮ কোটি টাকা ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়। এমনকি এ ঋণের বিপরীতে হাছান মাহমুদের জাহাজ বন্ধকীতে ছিল; তা রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আমাদের ইয়ার্ড থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। আর গত ১০ বছর আমাকে ব্যবসা করতে দেয়া হয়নি। ফলে গত এক দশক ব্যবসায়িকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সব মিলিয়ে হাছান মাহমুদের কারণে ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ পাওনা পরিশোধের জন্য আইনগত নোটিশ দেয়া হয়েছে।