হাজীগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ

বেলায়েত সুমন, চাঁদপুর: চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার ৬নং বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কবির হোসেন মিয়াজী ও সচিব হালিমা আক্তারের বিরুদ্ধে যথাসময় অফিসে হাজির না হওয়াসহ নানা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, চেয়ারম্যান কবির হোসেন মিয়াজী সপ্তাহে দুই-তিন দিন পরিষদে এলেও ১১টার আগে প্রবেশ করেন না। সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ, গালাগাল করাসহ জš§নিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্সের নামে বাড়তি অর্থ আদায় করেন। তার বিরুদ্ধে ইউনিয়নের সেবাগ্রহীতা বাসিন্দাদের হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে।

গত বুধবার সকাল ১০টায় সরেজমিনে হাজীগঞ্জের ৬নং পূর্ব বড়কুল ইউনিয়ন পরিষদে সচিবের কক্ষে প্রবেশ করতেই দেখা যায় চারপাশে লোকজন হাতে জš§সনদ, নিবন্ধন, প্রত্যয়নপত্র ও টাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। জš§ ও মৃত্যুসনদে প্রত্যয়নপত্রে স্বাক্ষর করার আগে সচিব হালিমা আক্তার সনদপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে নিজের ড্রয়ারে রাখছেন। কেউ টাকা কম দিতে চাইলে স্বাক্ষর করছেন না কাগজপত্রে। আবার কেউ টাকার রসিদ চাইলে তাকে রসিদ দিচ্ছেন না।

হালিমা অজুহাত তুলে বলছেন, ‘সব চেয়ারম্যান জানেন।’

চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি এক কাপ চা খাই না এই টাকা থেকে।’

এদিকে একই সময় এক গণমাধ্যমকর্মীর কাছ থেকে তার আত্মীয়ের মৃত্যুসনদ ও ওয়ারিশ সনদ দিতে ৩০০ টাকা নেন ইউপি সচিব হালিমা আক্তার, যে কাজটি সম্পন্ন করেন একই ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য। ইউপি সদস্য টাকা পরে দেয়ার কথা বলেন। পরে ৩০০ টাকা নিয়েই সনদ দেন সচিব হালিমা আক্তার। এ সময় হালিমার ডান পাশে ৫০০ টাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরেক ভুক্তভোগী। বাঁ পাশে এক গ্রাম পুলিশ সদস্য হাতে আঙুলের ফাঁকে ভাঁজ করে টাকা রেখে কাগজপত্র দিচ্ছেন। গণমাধ্যমকর্মী বিষয়টি চেয়ারম্যান কবির হোসেন মিয়াজীকে জানালে ৩০০ টাকা থেকে ১০০ টাকা ফিরিয়ে দিতে বলেন সচিব হালিমা আক্তারকে। সচিব ১০০ টাকা ফিরিয়ে দেন ওই গণমাধ্যমকর্মীকে।

একই দিন সকাল ১০টায় ইউনিয়ন পরিষদে আসেন উত্তর রায়চোঁ গ্রামের এক প্রবাসী বাসিন্দা। তিনি বলেন, নিজের জš§নিবন্ধনের জন্য এসেছি। টাকার খেলা দেখছি আর মানুষের হয়রানি দেখছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য বলেন, সচিব হালিমা আক্তার কোনোদিন ১১টা বা ১২টার আগে আসেন না। কেউ জন্ম নিবন্ধনের জন্য এলে প্রথমে তাকে ফিরিয়ে দেন। পরে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় চুক্তি করে নিবন্ধন দেন। আর ট্রেড লাইসেন্স করতে টাকা নেন বেশি, কিন্তু রশিদে উল্লেখ করেন কম। দ্বিগুণ-তিনগুণ টাকা ছাড়া হালিমা স্বাক্ষর করেন না কাগজে।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য ১০০ টাকা ও জন্মতারিখ ব্যতীত বাবার নাম, মায়ের নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন ফি ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সংশোধনের পর সনদের কপি বিনা ফি’তে সরবরাহ করার কথা থাকলেও দ্বিগুণ-তিনগুণ টাকা দিয়েও সেবা পাচ্ছেন না ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

অপরদিকে গণমাধ্যমকর্মীদের দেখার পর ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন স্থানীয় মানুষ। অনেকে অভিযোগ করেন, এক সপ্তাহ ঘুরেও জন্মনিবন্ধন ঠিক করতে পারছি না। আর এ পরিষদে তিনগুণ বেশি টাকা দেয়া ছাড়া কোনো কাজ হয় না। এক ভাগে টাকা নেন চেয়ারম্যান, আরেক ভাগে টাকা নেন সচিব। উদ্যোক্তাদের দিতে হয় আরেক ভাগে। তিন জায়গায় টাকা দিয়ে সেবা নিতে হয় সেবাগ্রহীতাদেরÑএমন অভিযোগ অসংখ্য ভুক্তভোগীর।

ক্ষোভ প্রকাশ করে ভুক্তভোগীদের অনেকে বলেন, প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড টাকা দিয়েও না পাওয়ায় প্রতিবাদ করায় খুন হয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী যুবক, এটা সেই এলাকা। টাকা দিলেও ভোগান্তির শেষ নেই এখানে।

স্থানীয় ভুক্তভোগীরা আরও জানান, ইউপি চেয়ারম্যানের অনিয়ম আর সহ্য হচ্ছে না মানুষের। এ কারণে কয়েক দিন আগে ইউনিয়ন পরিষদে ডাকা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শুরু হওয়ার আগে মানুষের রোষানলে পড়ে ছেঁড়া পাঞ্জাবি নিয়ে পালিয়ে যান চেয়ারম্যান। এছাড়া একই ইউনিয়নের এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে হত্যার পরিকল্পনা করার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন মিয়াজির বিরুদ্ধে।

কবির হোসেন মিয়াজী রাজধানীর কারওয়ান বাজারের তরকারি আড়তের কয়ালি ছিলেন। স্থানীয় রাজনীতিতে তার নামের আগে হাইব্রিড শব্দ ব্যবহার করেন ত্যাগী নেতারা। স্থানীয় রাজনৈতিক বলয়ের নেতাদের লাখো টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে চেয়ারম্যান হয়ে বিগত পাঁচ বছরে মানুষের পকেট কাটাতেই ব্যস্ত ছিলেন এ জনপ্রতিনিধি, এলাকার হাজারো ভুক্তভোগী মানুষ যার সাক্ষী।

ইউপি চেয়ারম্যান মো. কবির হোসেন মিয়াজী বলেন, এটা সচিবের কাজ। আমি সেখান থেকে একটা চায়ের পয়সাও নিই না। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।

আমলাদের বিরুদ্ধে লিখে কী হবে এমন প্রশ্নও করেন চেয়ারম্যান কবির হোসেন মিয়াজী। সচিব হালিমা আক্তারও দ্বিগুণ-তিনগুণ টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেন।

হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার শেয়ার বিজকে বলেন, এসব অনিয়ম আসলে চেয়ারম্যান-সচিবের সমন্বয়ে হয়ে থাকে। সেবাগ্রহীতা ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেব।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০