হাড়ের ব্যথা ও করণীয়

হাড়ব্যথা একটি উপসর্গ মাত্র। এটি একাধিক উপসর্গসহ প্রতীয়মান হতে পারে। এ ব্যথা পৃথক কোনো হাড়ে হতে পারে বা জোড়া ও পেশির সঙ্গে হতে পারে। অধিকাংশ ব্যথা হয় হাড়ের বাইরের স্নায়ু সংবেদনশীল আবরণ (পেরিওসটিয়াম) আক্রান্ত হওয়ার জন্য। পর্যাপ্ত স্নায়ু থাকে বলে মেরুদণ্ডের হাড়ে সবচেয়ে বেশি ব্যথা হয়। কিছু ক্ষেত্রে হাড়ের গঠন দুর্বল ও হাড় অকেজো হলে হাড়ের ভেতরের আবরণের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে তীব্র ব্যথার উদ্রেক হয়। অস্টিওআর্থ্রাইটিসে অতিরিক্ত হাড় বাইরের সংবেদনশীল আবরণকে ইরিটেশনের মাধ্যমে ব্যথার উদ্রেক করে। এছাড়া জোড়ার অস্থিতিশীলতা ও অভ্যন্তরীণ অসামঞ্জস্য নিকটবর্তী হাড়ে ব্যথা বাড়ায়। হাড়ব্যথার সঙ্গে শারীরিক অবসাদগ্রস্ততা ও ওজন কমতে থাকলে বুঝতে হবে রোগী ক্যানসারে আক্রান্ত। হাড়ের প্রাথমিক ক্যানসার ছাড়াও ফুসফুস, থাইরয়েড গ্রন্থি, স্তন, কিডনি ও প্রোস্টেটের ক্যানসার হাড়ে বিস্তৃত হয়ে তীব্র ব্যথার উদ্রেক করে। শিশুদের হাড়ে ব্যথা হলে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

হাড়ে আঘাত ও হাড় ভাঙা, ইনফেকশন, সেপটিসেমিয়া, টিউমার ও ক্যানসার, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি ও সি’র অভাব, বাতজ্বর, জোড়ার পেশি, লিগামেন্ট, রক্তশূন্যতা, ব্লাড ক্যানসার, অস্টিওপোরোসিস ও অস্টিওমালাসিয়া, হাইপারপ্যারাথাইরোডিজম ও হাইপারক্যালসিমিয়া, পেজেটস ডিজিস, ধূমপান ও মদপানের কারণে হাড়ে ব্যথা হয়ে থাকে।

চিকিৎসার শুরুতে ব্যথা সম্পর্কে জানতে হবেÑকোন হাড়ে ব্যথার উৎপত্তি, প্রথম কখন ব্যথা শুরু হয়, কত দিন ধরে ব্যথা, ব্যথা কি বেড়ে যাচ্ছে, ব্যথা ছাড়া অন্যান্য উপসর্গ কী? সঠিক কারণ অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিলে হাড়ব্যথা নিরাময়ে সুফল পাওয়া যাবে। ব্যথার কারণ নির্ণয়ে শারীরিক পরীক্ষা ছাড়াও রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা, অস্থিমজ্জা পরীক্ষা, এক্স-রে বিএমডি বোন স্ক্যান, সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই করতে হবে। কায়িক পরিশ্রম করলে হাড় মজবুত ও শক্তিশালী হয়। ফলে হাড়ে ব্যথা কম হয়। উপযুক্ত ব্যয়াম, যেমন নিয়মিত হাঁটা, জগিং, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করা এবং ওজন বহন করা হাড়কে মজবুত ও শক্তিশালী করে। ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা উচিত। পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সি ও ডি সেবনে হাড়ব্যথা প্রতিরোধ ও লাঘব হয়। হাড়ের বিভিন্ন উপাদানের ক্ষয় পূরণের জন্য পরিমিত ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও বিসফোসফোনেট সেবন, থেরাপি এবং রেলোক্সেফিন ও ক্যালসিটোনিন ইনজেকশন পুশ করার প্রয়োজন হতে পারে। ব্যথার ওষুধ ছাড়া প্রাথমিক কারণের জন্য কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, শল্য ও আর্থোস্কোপিক চিকিৎসা এবং অন্যান্য ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।

অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০