হাড় কাঁপানো শীতে চিতই-ভাপা পিঠার কদর বেড়েছে

অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ: যমুনা নদী পাড়ের জেলায় মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও ঘনকুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় সিরাজগঞ্জে জেঁকে বসেছে কনকনে শীতের তীব্রতা। ফলে হাড় কাঁপানো শীতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ৯টি উপজেলাসহ চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া নি¤œ আয়ের মানুষ।

এদিকে শীত বাড়ায় উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, ফুটপাতে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান। কেউ খুব সকালে, কেউবা বিকালে আবার কেউ কেউ সন্ধ্যায় দোকান বসিয়ে পিঠা বিক্রি করছেন। মৌসুমকে কেন্দ্র করে পিঠা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন মৌসুমি পিঠা বিক্রেতারা। এতে  কদরও বেড়েছে এসব দোকানের।

সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে চিতই ও ভাপা পিঠার দোকান। আর সেই পিঠার স্বাদ নিতে দোকানে ভিড় জমান সব শ্রেণির মানুষ। পুরুষদের পাশাপাশি অনেক নারীও দোকানে পিঠা বিক্রি করছেন। এর মাধ্যমে তারা বাড়তি আয় করতে পারছেন। অন্যদিকে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে ধুম পড়েছে হরেক রকমের পিঠা বানানোর।

গত শুক্রবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শহরের খলিফা পট্টি, মুজিব সড়ক, কালিবাড়ী, চান্দ আলী মোড়, বাজার স্টেশনে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান। এসব দোকানে ভাপা, চিতই, তেলের পিঠাসহ নানা বাহারি পিঠা বানানো হচ্ছে। প্রতিটি পিঠার দাম ১০ টাকা। তবে মৌসুমি পিঠা বিক্রেতারা বেশিরভাগই দিনাজপুর, সিলেট, কুষ্টিয়া, রংপুর ও ঠাকুরগাঁওসহ আশপাশের জেলার। প্রতি মৌসুমে ৫০ থেকে ৬০ জন সিরাজগঞ্জে আসেন পিঠা বিক্রির জন্য।

সাধারণত ভাপা পিঠা ও চিতই পিঠা ১০ টাকায় বিক্রি করা হয়। তার মধ্যে ভাপা পিঠা তৈরি করতে প্রয়োজন চালের গুঁড়া, নারিকেল কুরানো, খেজুর গুড়, লবণ, সামান্য পানি দিয়ে গোলাকার এ পিঠার জন্য ছোট ২টি বাটি, ২ টুকরো পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে ২-৩ মিনিট ফুটন্ত পানির ধুয়া দিয়ে তৈরি করা হয় ভাপা পিঠা। প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করেন একজন পিঠা বিক্রেতা। এ থেকে খরচ বাদে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা লাভ হয়।

সরিষা, ধনে পাতা, শুঁটকি ভর্তা মাখিয়ে সুস্বাদু চিতই পিঠা খাচ্ছেন কিশোর-কিশোরীসহ বয়োবৃদ্ধরাও। এই পিঠার স্বাদ পেতে রিকশাচালক, দিনমজুর, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী সব শ্রেণি-পেশার মানুষই পিঠার দোকানে ভিড় করছেন। অনেকে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যায় পিঠা নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে।

শহরের কাঠেরপুল এলাকার মৌসুমি পিঠা বিক্রেতা ফরহাদ আলী বলেন, আমি গরমের সময় দিনমজুরির কাজ করি। শীতে পিঠার চাহিদা বেশি থাকায় শীত মৌসুমে পিঠা বিক্রি করি। রোজগার ভালোই হয়, পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো আছি।

শহরের স্বাধীনতা স্কয়ার চত্বর এলাকার পিঠা বিক্রেতা শেফালী বেওয়া বলেন, ‘আমি বাসাবাড়িতে কাজ করি। কিন্তু শীতে কাজ করতে খুব কষ্ট হয়। তাই শীত এলেই পিঠা বিক্রি করি। এবার শীত বেশি হওয়ায় পিঠার চাহিদাও বেশি হয়েছে।’

শহরের মুজিব সড়কে পিঠা কিনতে আসা আব্দুল মজিদ সরকার বলেন, উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কনকনে শীতের ঠাণ্ডা বাতাসে গরম গরম পিঠা খেতে খুব মজা। আমি তিনটা খেয়েছি। পরিবারের জন্য ১০টা নিয়ে যাচ্ছি।

পিঠা খেতে আসা স্কুলছাত্র নীরব হোসেন ও আশিক জানায়, প্রতিদিন চপ, শিঙাড়া, পুরি খেতাম। শীত আসার পর থেকে প্রতিদিন ভাপা ও চিতই পিঠা খাই। শীতে ভাপা ও চিতই পিঠা খেতে খুব মজা।

রিকশাচালক আব্দুল কুদ্দুস মিয়া বলেন, কয়েক দিনের কনকনে শীতের মধ্যে রিকশা চালানো খুবই কষ্টকর। তাই একটি গরম চিতই পিঠা খেয়ে শরীরটা গরম করার চেষ্টা করছি।

সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আবু ইউসুফ সূর্য জানান, ‘শীত এলেই অনেক দূর-দূরান্ত জেলা থেকে মৌসুমি পিঠা বিক্রেতারা প্রতি বছর এ জেলায় আসেন। তাদের পিঠাগুলো অনেক সুস্বাদু। মাঝে মধ্যে আমিও পরিবারের জন্য এই পিঠাগুলো নিয়ে থাকি।’ ভ্রাম্যমাণ এই দোকান শহর ও উপজেলার বিভিন্ন মোড়ে বসানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

সিরাজগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. রামপদ রায় বলেন, পথে-ঘাটে অনেক পিঠার দোকান বসে। দোকানদার অবশ্যই দুই হাত ধুয়ে পিঠা তৈরি করবেন। ক্রেতারা হাত ধুয়ে পিঠা খাবেন। কখনোই পচা ও বাসি খাওয়া উচিত নয়। এতে গ্যাস্ট্রিকসহ ডায়রিয়া হতে পারে। এজন্য সবাইকে সচেতন থাকার জন্য পরামর্শ দেন তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০