শেয়ার বিজ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে চূড়ান্ত ফলের অপেক্ষায় বিশ্ববাসী। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন ২৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট জিতে এগিয়ে রয়েছেন। শুরুর দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে বেশ বড় ব্যবধানেই এগিয়ে ছিলেন বাইডেন। তবে সময়ের সঙ্গে সেই দূরত্ব কমিয়ে এনেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী। বর্তমানে তার ঝুড়িতে রয়েছে ২১৩টি ইলেকটোরাল ভোট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অন্যতম ব্যাটলগ্রাউন্ড পেনসিলভানিয়াসহ এখনও অন্তত সাতটি অঙ্গরাজ্যের ফল আসতে বাকি। সেগুলোর মধ্যে অন্তত পাঁচটিতেই এগিয়ে ট্রাম্প। খবর: বিবিসি, সিএনএন ও রয়টার্স।
বাকি থাকা অঙ্গরাজ্যের মধ্যে জো বাইডেন এগিয়ে নেভাদা, মিশিগান ও উইসকনসিনে। এ তিনটি অঙ্গরাজ্যে ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে যথাক্রমে ছয়, ১৬ ও ১০টি। ফলে এসব জায়গায় জয় পেলে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর ঝুড়িতে জমা হবে মোট ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। অর্থাৎ নির্বাচনে জিততে প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পাওয়ার পথে তিনি। বিপরীতে ডোনাল্ড ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া ও আলাস্কায়। এগুলোর মধ্যে পেনসিলভানিয়ায় ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে ২০টি, নর্থ ক্যারোলিনায় ১৫, জর্জিয়ায় ১৬ ও আলাস্কায় তিনটি। ফলে এ চারটি অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্প জিতলে তার ইলেকটোরাল ভোট হবে মোট ২৬৭টি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে মোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে অন্তত ২৭০টি নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ সময় গতকাল বুধবার দুপুরেও এ অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকানদের এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। বিকালের দিকে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে যায় ডেমোক্র্যাটরা। সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, ১০টি ইলেকটোরাল ভোট থাকা উইসকনসিনে ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ।
অবশ্য এবারের নির্বাচনে শুধু প্রত্যক্ষ ভোটেই বিজয়ী নির্ধারণ হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট কে হবেন, তা নির্ধারণে এ বছর ১০ কোটির বেশি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। এসব ভোট গণনা হতে সময় লাগবে আরও কয়েক দিন। ফলে ট্রাম্প না বাইডেনÑহোয়াইট হাউসের দখল কার হাতে যাচ্ছে, তা জানতে অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।
এদিকে যে আইনি লড়াইয়ের দুঃস্বপ্ন আর শঙ্কা নিয়ে ভোট শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, তাই-ই এখন বাস্তবের দিকে যাচ্ছে। জো বাইডেন বলছেন তিনি জয়ের পথে আছেন, আর ডোনাল্ড ট্রাম্প ভিত্তিহীনভাবে ভোট চুরির অভিযোগ করছেন। এরকম চলতে থাকলে শেষমেশ ফলাফল আদালতে গড়ানো এবং পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠার বড় ধরনের আশঙ্কা আছে। ভোটের চূড়ান্ত ফল না এলেও এটি পরিষ্কার যে, যুক্তরাষ্ট্রে এখনও চরম বিভক্তি থেকেই যাচ্ছে। আমেরিকান ভোটাররা ট্রাম্পকে জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যানও করেনি, আবার তার আশানুযায়ী বিপুল সমর্থনও দেয়নি। আর তাই নির্বাচনে যেই জয়ী হোক, রাজনৈতিক যুদ্ধ চলতেই থাকবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক ভাষণে নির্বাচনের ফলের প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, তিনি সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। আর ডেমোক্র্যাটদের সম্পর্কে তার বক্তব্য ছিল, ‘তারা জানে যে তারা জিততে পারবে না। আর তাই তারাও বলছে, আদালতেই যাই।’ ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারের সময়ও বিভিন্ন সমাবেশে আইনি পথে যাওয়া নিয়ে জোর গলাতেই কথা বলেছিলেন। কিন্তু তার প্রতিপক্ষ জো বাইডেন নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে আইনি পথে যাওয়া নিয়ে সরাসরি কোনো কথা বলেননি। তবে বাইডেন কিছু না বললেও তিনি এ লড়াইয়ের জন্য তার আইনজীবীদের প্রস্তুত রেখেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী আইনানুযায়ী, সব রাজ্যেরই সব ভোট গণনা করা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু অন্যান্যবারের তুলনায় এ বছর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আগাম পোস্টাল ভোট এবং ভোটকেন্দ্রে গিয়ে মানুষ যে ভোট দিয়েছেন সেগুলোরও অনেক ভোট গোনা এখনও বাকি। বাইডেন বলেছেন, ভোট গোনা বন্ধ করার চেষ্টায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি তার হুমকি মতো আদালতে যান, তাহলে তা মোকাবিলায় তার (বাইডেন) আইনজীবী দল প্রস্তুত আছে।
গতকাল নির্বাচনে ভোটচুরির চেষ্টা চলছে বলে হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক ভাষণে অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প। ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগে তিনি জয়লাভ করছেন দাবি করে জানান, তিনি সুপ্রিম কোর্টেও যাবেন। তবে তিনি কেন সুপ্রিম কোর্টে তা জানাননি। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে জিতেছি।’ ভোট গণনা নিয়ে অভিযোগ করে তিনি বলেন, মার্কিন নাগরিকদের সঙ্গে এটা প্রতারণা।
ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা সব ভোট বন্ধ চাই।’ মঙ্গলবারের পরও যেসব ভোট পোস্টের মাধ্যমে আসবে, সেগুলো গ্রহণ করা বৈধ বলে জানিয়েছে রাজ্য নির্বাচন বোর্ড। এগুলো যথাসময়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প এসব ভোট নিয়ে তার আপত্তি জানিয়েছেন।
ট্রাম্প ভিত্তিহীনভাবে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত পাওয়া ফল অনুযায়ী, তিনি পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন বলা যায় না। কারণ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের ব্যাপারে চূড়ান্ত কিছু বলার সময় আসেনি। তবে ট্রাম্প যে এমনটা করতে পারেন, আগেই তার আভাস মিলেছিল। ৩১ অক্টোবর (শনিবার) নিউজ পোর্টাল অ্যাক্সিওসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ট্রাম্প তার ঘনিষ্ঠজনদের বলেছেন; মঙ্গলবার রাতে যদি ‘এগিয়ে থাকার’ আভাস পান তাহলে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল জানানোর আগেই তিনি নিজেকে বিজয়ী বলে ঘোষণা দেবেন। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য শুনেছেনÑএমন তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল অ্যাক্সিওস।
নির্বাচনের রাতে ডেলাওয়ারের উইলমিংটনে এক বক্তৃতায় ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন বলেছেন, তারা জয়ের পথে রয়েছেন বলে বিশ্বাস করেন। ‘সব ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখন আমাদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। আমরা যে অবস্থায় রয়েছি, তাতে আমরা আশাবাদী। আমরা অ্যারিজোনায় জয় পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।