হাতিয়ায় ১০ ইউনিয়ন প্লাবিত, ৫০ হাজার মানুষ পানি বন্দী

প্রতিনিধি, নোয়াখালী: গত চারদিন ধরে অতিবৃষ্টি, অমাবশ্যা ও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে হাতিয়ার মেঘনায় ১২ ফুট উচ্চতার জোয়ার বইছে। বহমান জোয়ারের অত্যধিক তান্ডবে কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে আবার কোথাও বাঁধের ওপর দিয়ে পানি ডুকে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে গত চারদিন ধরে কমপক্ষে ১০ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য, ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ১৯৭০ সালের পর এ এলাকার মানুষ কখনো ১২ ফুট উচ্চতার জোয়ার দেখেনি। হাতিয়ার চারপাশের বিভিন্ন স্থানের বেড়ির ভাঙ্গা অংশ দিয়ে এবং বেড়ির ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি ডুকে ১০টি ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়ে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

এসব এলাকায় খাদ্য, ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট রয়েছে জানিয়ে বলেন, সরকার ইতোমধ্যে পানিবন্দী মানুষের জন্য ৪০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ করেছেন বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে রোববার, সোমবার থেকে তা বিলি করা হবে।

স্থানীয়রা জানায়, জোয়ারের পানিতে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার প্রায় এলাকার হাটবাজার তলিয়ে যাওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। রয়েছে ওষুধেরও তীব্র সংকট। এছাড়া জেয়ারের পানিতে এ দ্বীপের হাজার হাজার পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকতা ফরিদ হোসেন বলেন, ক্ষয়ক্ষতি প্রচুর হয়েছে। তবে এখনো দৈনিক দুইবার জোয়ার-ভাটা হচ্ছে। জোয়ার একেবারে নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব দেয়া যাবে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, হাতিয়ার চারপাশে মেঘনা নদী। নদীর পানি জোয়ারের সময় খাল দিয়ে মূল ভূখন্ডে ঢুকে পড়ছে। তাছাড়া কিছু স্থানের বেড়িবাঁধও ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরে একাধারে বৃষ্টিও হচ্ছে। একারণে অনেকগুলো গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত অনেকগুলো এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি। প্রায়গুলো পানিতে বন্দী। বয়ার চর এলাকায় রিং বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ায় সেখানে তলিয়ে গেছে কয়েক শত হেক্টরের উঠতি আমন ফসল।

উপজেলা কৃষি কর্মকতা আরো বলেন, মূল হাতিয়ায় আউশের ফলন হয় বেশি। এ কারণে এখানে আউশের আর চরাঞ্চলে আমনেরই ক্ষতি হয়েছে বেশি। তবে নদীর পানি একেবারে সরে গেলে কৃষকের আসল ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দেয়া যাবে।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম খান বলেন, হাতিয়ার হরনি ও চানন্দির বেড়িবাঁধ ভেংগে যাওয়ায় মানুষের দুঃখ, কষ্ট নিজে সরেজমিনে দেখে এসেছেন। গোটা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি সরকারকে জানাবেন বলেও জানান।

হাতিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ জানান, পুরো হাতিয়া এখন জোয়ারের পানিতে ভাসছে। এমনিতেই সুখচর, নলের চর, চরকিং, চরঈশ্বর, তমরুদ্দি, জাহাজমারা এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সোনাদিয়া ও তমরুদ্দি ইউনিয়নের কয়েক স্থানে বেড়ি ভেঙ্গে পানি ডুকে বাড়ি-ঘর, ক্ষেতের ফসলসহ ভেসে গেছে কোটি টাকার মাছ। এসব এলাকার মানুষ আর্থিকভাবে চরম ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে বলে তিনি জানান।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০