নিজস্ব প্রতিবেদক: লোকালয়ে এসে হাতি কারও জমির ধান খেয়ে ফেললে ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল। বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস উপলক্ষে বন অধিদপ্তরে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। মোস্তফা কামাল বলেন, ‘জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ আমাদের সবার দায়িত্ব। হাতি ধানের মৌসুমে লোকালয়ে চলে আসে খাবারের জন্য। তখন হাতি ধান খেলে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে মানুষজন। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে আমরা জানিয়েছি, আমরা সবাইকে জানাতে চাই ধানের জন্য হাতি মারার দরকার নেই। হাতি যতটুকু ধান খায়, খেয়ে যাক। তার চেয়ে বেশি ক্ষতিপূরণ আমরা দিয়ে দেব এবং সেই ক্ষতিপূরণ আমরা ১৫ দিনের মধ্যে দেব।’
এই খাতে রাষ্ট্র অর্থ রেখেছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই টাকা দিয়ে আমরা হাতির জীবন রক্ষা করতে চাই। হাতিরও সংসার ছিল, আবাসস্থল ছিল, ওগুলো আপনারা দখল করে ধান চাষ করছেন। হাতিসহ সব বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য তাদের আবাসস্থল রক্ষা করা জরুরি।’
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়– পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য সবার আগে বন সংরক্ষণ করা জরুরি। যারা এ দায়িত্বে আছেন, তাদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। স্তন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সঠিকভাবে সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি। কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে জেব্রার মৃত্যু হলো। আমরা সেটার পুনরাবৃত্তি চাই না। আবার কিছুদিন আগে হাতিও মারা গেছে। হাতির মৃত্যুর কারণ আমরা উদঘাটন করার চেষ্টা করছি। মূল কারণ হাতির খাবার নেই। হাতির আবাসস্থল সংরক্ষণ এবং তাদের খাবারের ব্যবস্থা করলে হাতি আর লোকালয়ে আসবে না। হাতির খাবারের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সরকার ৫১টি এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে বলে জানান তিনি। বন্যপ্রাণী পাচার রোধে এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট কাজ করছে। বন্যপ্রাণী ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য বন্যপ্রাণী দ্বারা আক্রান্ত জানমালের ক্ষতিপূরণ বিধিমালা, ২০২১ প্রণয়ন করা হয়েছে।
বনমন্ত্রী জানান, দেশের এক হাজার ৬১৯ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অবস্থা মূল্যায়ন করে বিপন্নপ্রায় প্রজাতির লাল তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া মহাবিপন্ন বাংলা শকুন রক্ষায় ক্ষতিকারক ভেটেরিনারি ওষুধ ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেনের উৎপাদন দেশব্যাপী নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাতি সংরক্ষণের জন্য চট্টগ্রামের চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যকে মাইক সাইট (অবৈধভাবে হাতি হত্যা রোধে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা) ঘোষণা করা হয়েছে। হাতিসমৃদ্ধ বনাঞ্চলে হাতির খাদ্য উপযোগী বাগান সৃজন করা হচ্ছে। বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন, আইইউসিএন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ রাকিবুল আমিন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু বক্তৃতা করেন।