Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 5:53 pm

হাত কাঁপে কেন

 

হাত কাঁপা বা ট্রেমর হলো কবজি ও আঙুলের পেশিগুলোর অনিচ্ছাকৃত নড়াচড়া। এ ধরনের সমস্যা বয়স্ক মানুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়। হাতে কাঁপুনি হলে প্রতিদিনকার কাজকর্ম করতে সমস্যা হয়। সাধারণত বোতাম লাগানো, চামচ দিয়ে কিছু খাওয়া বা লিখতেও সমস্যা হয়।

শুরুতে এক হাতে কাঁপুনি শুরু হয়, যেটা পরবর্তী সময়ে অন্য হাতে ছড়িয়ে পড়ে। একসময় দুটি হাতই কাঁপতে থাকে এবং কাঁপুনি বেড়ে যায়।

কারণ: হাত কাঁপা সাধারণত স্নায়ুতন্ত্রের রোগ। বয়স্কদের পারকিনসনস রোগের কারণে এমনটা হয়। জিনের পরিবর্তনের কারণে এমন হতে পারে। এ ছাড়া অন্যান্য কারণ হলো হাইপারথাইরয়েডিজম, মাল্টিপল স্কলেরোসিস, ডায়স্টেনিয়া, বেশি বয়স, পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি ও স্ট্রোক। অতিরিক্ত কফি খেলে স্নায়ুর কার্যকারিতার ওপর প্রভাব পড়ে। এতে বুক ধড়ফড়ানির পাশাপাশি হাতে কম্পন সৃষ্টি হতে পারে। অনেক ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় হাত কাঁপে।

অতিরিক্ত চা কিংবা অ্যালকোহল পানেও একই সমস্যা হতে পারে। অনেকে মনে করেন ধূমপান মানসিক চাপ কমাবে। বরং উল্টোটা হতে পারে, ধূমপান কিন্তু উৎকণ্ঠাও বাড়ায়। সিগারেটে থাকা নিকোটিন হƒৎস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে হাতও কাঁপে। শরীরের স্নায়ুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ভিটামিন বি ১২ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শরীরে এ ভিটামিনের ঘাটতি হলে হাত কাঁপার সমস্যা হতে পারে।

রোগনির্ণয়: হাত কাঁপার ইতিহাস না জানলে চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে। রোগীর অবস্থা বিবেচনায় রক্ত পরীক্ষা, যেমন সিবিসি, থাইরয়েড হরমোন, ভিটামিন বি১২-এর মাত্রা পরীক্ষা বা মাথার সিটি স্ক্যান করা হয়।

চিকিৎসা: কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হয়। দৈনিক সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি। ঘুম ভালো না হলে মস্তিস্কের কার্যকারিতা কমে যায়। তখন অনেকে চাপ অনুভব করেন এবং পাশাপাশি হাত কাঁপা সমস্যা দেখা দেয়। ওষুধ হিসেবে অনেক সময় বিটাব্লকারস যেমন প্রোপ্রোনোলোল ও প্রিমিডোন, অ্যান্টি সিজার ওষুধ, বোটোক্স ও দুশ্চিন্তা কমানোর ওষুধ দেয়া হয়। এগুলো কাঁপুনির তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে। তবে মূল কারণের চিকিৎসা করতে হবে। অনেক সময় মস্তিষ্কের থ্যালামোটমি অস্ত্রোপচার কাঁপুনি কমাতে সাহায্য করে। ফিজিওথেরাপির ভূমিকা আছে। ভর ব্যবহার, কবজিতে স্ট্র্যাপ পরা ও চাপমুক্ত বলের ব্যায়ামও কাঁপুনির তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে। মদ্যপান, ধূমপান এবং অতিরিক্ত চা বা কফি পান ত্যাগ করতে হবে। নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও ঘুমের অভ্যাস করতে হবে।

ডা. এমএস জহিরুল হক চৌধুরী

অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল