হামলার যৌক্তিকতা বোঝাতে আত্মরক্ষার দোহাই ইসরায়েলের

শেয়ার বিজ ডেস্ক: শুনানির দ্বিতীয় দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে ইসরায়েলের প্রধান যুক্তি ছিল যে, ৭ অক্টোবরে হামাসের আক্রমণের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্যই গাজায় আক্রমণ চালিয়েছে ইসরায়েল। খবর: আল জাজিরার।

গাজা সংঘাত ঘিরে নেদারল্যান্ডসের হেগে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে গতকাল শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকার আনা গণহত্যা মামলার শুনানিতে পাল্টা জবাব দিয়েছে ইসরায়েল। এর আগে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম দিনের শুনানি হয়েছে।

শুনানিতে ইসরায়েলের আইনি প্রতিনিধিরা হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শন করেন।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনি উপদেষ্টা তাল বেকার ইসরায়েলের পক্ষে উদ্বোধনী বিবৃতি দিয়েছেন। বেকার বলেছেন, গাজা যুদ্ধের প্রাদুর্ভাবের কারণ অনুধাবনের জন্য আদালতের জন্য কিছু ফুটেজ দেখা গুরুত্বপূর্ণ। ইসরায়েল কী ধরনের হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে এবং সশস্ত্র বাহিনীর বর্বরতা ও অনাচারের প্রকৃতিকে উপলব্ধি না করে গাজার সশস্ত্র সংঘাতকে বোঝা অসম্ভব।

হামাস পরিচালিত ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, ইসরায়েল তাদের ২৩ হাজার নাগরিককে হত্যা করেছে, যার মধ্যে ১০ হাজার শিশু।

এই ঘটনাকে দক্ষিণ আফ্রিকা গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছে, কারণ তাদের ভাষ্য, ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল। দক্ষিণ আফ্রিকা গত বছরের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, কোনো গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা বা শারীরিক-মানসিক ক্ষতিসাধন, আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞ চালানো, নতুন মানবশিশুর জন্মে বাধাদান ও উদ্বাস্তুতে পরিণত করার মতো ব্যাপারগুলোকে গণহত্যা চালানোর উপায় বলে মনে করা হয়।

গাজায় এসব ব্যাপারই ঘটিয়ে চলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাই তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে অনুরোধ জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, যেন যত দ্রæত সম্ভব ‘প্রোভিশনাল মেজারস’ ব্যবহার করে আদালত ইসরায়েলকে থামায়। মূলত ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে এই জরুরি আদেশ দিয়ে আগেভাগেই ধ্বংসলীলা থামিয়ে দেয়া যায়। এক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তার জন্য জেনোসাইড কনভেনশনের লঙ্ঘনকারী ইসরায়েল যেন দায়মুক্তি না পায়, সেটিও দক্ষিণ আফ্রিকার চাওয়া।

দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু বলছেন, ‘না, দক্ষিণ আফ্রিকা, গণহত্যার জন্য আমরা দায়ী নই, দায়ী হামাস। তারা যদি পারত আমাদের (ইসরায়েল) সবাইকে হত্যা করত। বরং, আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) যথাসম্ভব নৈতিকতার সঙ্গে কাজ করছে।’

প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারযোগও এই মামলাকে ‘অবান্তর’ ও এই অভিযোগকে ‘বøাড লাইবেল’-এর তুল্য মনে করছেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ গঠিত হলে নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) বা আন্তর্জাতিক আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দ্ব›েদ্বর নিষ্পত্তি ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আইনি পরামর্শ দেয়ার কাজ করেন এই আদালত।

আফ্রিকার জাতীয় কংগ্রেসের ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি জ্ঞাপনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলা দীর্ঘ সংগ্রামের সমান্তরালে চলেছে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের প্রতি তাদের সংহতি জ্ঞাপন। ৭ অক্টোবরের আক্রমণের সমালোচনা করেছিল দেশটি, দাবি জানিয়েছিল জিম্মিদের মুক্তির।

প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো কয়েক সপ্তাহমাত্র স্থায়ী হবে, কাজেই দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষেই হোক বা বিপক্ষে, কয়েক সপ্তাহের ভেতরেই আদালত রায় দেবে বলে মনে করা যায়। তবে মূল মামলার ক্ষেত্রে আরও অনেক সময় লাগবে। আইসিজের বিচারিক কার্যক্রম এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া।  রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে আইনি প্রতিনিধিদের মৌখিক তর্কাতর্কির পর বিস্তারিত লিখিত প্রতিবেদন দিতে হবে। ফলে মামলায় আদেশ পেতে তিন-চার বছর সময় লাগতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ নিয়েছে বেশকিছু দেশ। মালয়েশিয়া, তুরস্ক, জর্ডান, বলিভিয়া, মালদ্বীপ, নামিবিয়া, পাকিস্তান, কলম্বিয়া এবং ওআইসি-র সদস্য রাষ্ট্রগুলো রয়েছে এই তালিকায়।

আন্তর্জাতিক আদালতের দেয়া সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত এবং আপিলের সুযোগ নেই। তবে আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে সেই রায় প্রয়োগের কোনো উপায়ও নেই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০