হামাসের শীর্ষ নেতা হত্যার জেরে বেড়েছে তেলের দাম

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়াকে ইরানে হত্যার জেরে গতকাল বুধবার বিশ্ববাজারের তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি এক ডলারের বেশি বেড়েছে। বুধবার সকালে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ দশমিক ১৭ ডলার বা ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৭৯ দশমিক ৮০ ডলারে উঠেছে। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ দশমিক ১৫ ডলার বেড়ে ৭৫ দশমিক ৮৮ ডলারে উঠেছে। খবর: রয়টার্স।

এর আগে গত মঙ্গলবার জ্বালানি তেলের দাম সাত সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়। তার আগের দিন গোলান উপত্যকায় হামলার জেরে তেলের দাম কিছুটা বেড়েছিল। গত সোমবার সকালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ২০ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৮১ দশমিক ৩৩ ডলারে ওঠে। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিআই ক্রুডের দামও ৯ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৭৭ দশমিক ২৫ ডলারে ওঠে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে তেলের বাজার ওঠানামা করছে।

মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মাত্রা ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও বিশ্ববাজারে তেলের দাম খুব একটা বাড়ছে না। এর পেছনে অর্থনীতির কিছু নিয়ম কাজ করছে। অর্থাৎ চাহিদা ও জোগান বেড়েছে। এছাড়া চীনের অর্থনীতি গতি হারিয়ে ফেলায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও ফিলিস্তিনের হামাস গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামাসের প্রধান নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করা হয়েছে।
এর ঠিক এক দিন আগে ইসরায়েল দাবি করে, বৈরুতে এক বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ কমান্ডারকে হত্যা করা হয়েছে। গত শনিবার ইসরায়েলে রকেট হামলার প্রতিশোধ হিসেবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

এমন এক সময় পরপর এই হত্যাকাণ্ড ঘটল, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ মধ্যপ্রাচ্যের বড় ধরনের সংঘাত এড়ানোর লক্ষ্যে কূটনৈতিকভাবে সক্রিয়। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে পৃথক আরেকটি হামলা চালিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার মাত্রা বৃদ্ধির পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
টানা তিন সপ্তাহ ধরে তেলের দাম কমার পর বিনিয়োগকারীরা এখন আর এমন সম্ভাবনা খুব একটা দেখছেন না যে দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে। স্বল্প মেয়াদে দাম বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এই পরিস্থিতির মধ্যে গত বছরের জুনের পর এ বছরের জুলাইয়ে জ্বালানি তেলের দাম সবচেয়ে কমেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া তেলের দাম না বাড়ার মূল কারণ। বছরের প্রথম ভাগে চীনের তেল আমদানি ১১ শতাংশ কমেছে। বছরের বাকি সময়ে তার চাহিদা বাড়বে, এমন সম্ভাবনা কম। এছাড়া আগামী অক্টোবরে এই পরিস্থিতির মধ্যেও ওপেক তেলের উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করবে-এমন ধারণা সৃষ্টি হওয়ার কারণে তেলের দাম চলতি মাসে কমেছে।
এই পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে। মূলত তেলের উৎপাদন নিয়ে এ বৈঠক হবে। বিশ্বের বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ চীনের চাহিদা কমে যাওয়া এখন এই তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চীনের সরকারি পরিসংখ্যানে জানা যায়, জুলাইয়ে এ নিয়ে টানা তৃতীয় মাসে চীনের উৎপাদন কার্যক্রম সংকুচিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চীনের তেলের চাহিদা বৃদ্ধির যে সম্ভাবনা খুবই কম, তা পরিষ্কার। দেশটির জিডিপির সবচেয়ে বড় উৎস আবাসন খাতের দুরবস্থার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনীতি চাঙা করতে চীন সরকারকে নতুন করে প্রণোদনা দিতে হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে পড়তে শুরু করেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেল ও গ্যাসোলিনের ভান্ডার কমতে শুরু করেছে। গত ২৬ জুলাই শেষ হওয়া সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুত কমেছে ১১ লাখ ব্যারেল।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০