নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের হারিয়ে যাওয়া ফাইলগুলো তেমন গোপনীয় নয় বলে জানিয়েছেন এ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর। তিনি বলেন, ফাইল হারিয়ে যাওয়াটাই বড় বিষয়। ১৭টি ফাইল হারানোর পর গতকাল পুলিশের তদন্ত শুরুর দিন নিজ দপ্তরে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।
ফাইলগুলো কী সংক্রান্ত ছিল জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘এগুলো ক্রয়-সংক্রান্ত। এগুলো তেমন গোপনীয় কিছু নয়। প্রত্যেকটা ফাইলের তথ্য আমাদের অন্যান্য বিভাগেও আছে, আমাদের কম্পিউটারেও আছে, আমাদের ডিজি অফিসগুলোয়ও আছে। এটা নিয়ে তেমন সমস্যা নয়, কিন্তু মূল বিষয়টা হচ্ছে ফাইল মিসিং হওয়াটা। এটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়। এটিই উদ্ধারের চেষ্টা করছি।’
১৭টি নথি গায়েব হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় শাহবাগ থানায় জিডি দায়ের করে, জানানো হয় সিআইডিকেও।
গতকাল সকালে শাহবাগ থানা পুলিশ ও সিআইডির সদস্যরা সচিবালয়ে এসে তিন নম্বর ভবনের নিচতলার ২৯ নম্বর কক্ষ থেকে আলামত সংগ্রহ করেন এবং সেখানে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয় কর্মচারীকে নিয়ে যান তারা।
নথি গায়েবের ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের কাউকে সন্দেহ করেন কি নাÑএমন প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘সন্দেহের বিষয়টা তো এখন বলাটা কঠিন। কারণ আমরা তো সত্যিকারভাবেই আসলে জানি না, কে এই কাজটি করেছে। আমি তো মনে করি যে, আমরা সবাই সন্দেহের মধ্যেই আছি। আমরা পুলিশকে সেভাবেই বলেছি, আপনারা সবাইকেই ইনক্লুড করবেন, যাতে আমরা তথ্যটা জানতে পারি, উদ্ধার করতে পারি।’
সচিব আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার একটি লকারের একটি ড্রয়ার থেকে কিছু ফাইল মিসিং হয়েছে, এটা জানার পরে আমরা সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অফিসারদের সেখানে পাঠাই। পরে আমরা নিশ্চিত হলাম যে, মিসিং হয়েছে। এটা শোনার পর আমি স্পটে গিয়েছি। আমাদের অতিরিক্ত সচিবরা আমার সঙ্গে ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি পুলিশকে খবর দিলাম। এডিসিসহ আরও দুই কর্মকর্তা আমাদের এখানে এসেছেন। তারা বিষয়গুলো দেখেছেন। দেখার পর আমি তাৎক্ষণিকভাবে মন্ত্রীকে অবহিত করি, ক্যাবিনেট সচিবকে অবহিত করি এবং পুলিশকে অনুরোধ করি প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।’
সচিব বলেন, ‘এর বাইরে সিআইডিকে অনুরোধ করি, বিষয়টা টেক আপ করার জন্য, যাতে আমাদের যে বিষয়টা ঘটে গেছে, এটাতো আমাদের উদ্ধার করতে হবে, যেভাবেই হোক। কারা এর সঙ্গে জড়িত, এটা খুঁজে বের করতে হবে কীভাবে হলো, কখন হলো। এটাই ছিল আমাদের মূল বিষয়।’
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, প্রকৃত ঘটনাটা যেন আমরা জানতে পারি।’
এ ঘটনায় চার সদস্যদের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘সেই কমিটিও কাজ শুরু করেছে। আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই একটি তথ্য জানতে পারব কারা কীভাবে কাজটি করেছে এবং কেন করেছে।’
এ ঘটনায় তদন্তে আসা সিআইডির পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান জানান, পুলিশের পাশাপাশি তারা ছায়া তদন্তের কাজটি করছেন।
এদিকে নথি গায়েবের ঘটনায় ছয় কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল দুপুরের পর সিআইডি কার্যালয়ে নেয়া হয় তাদের। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রাথমিকভাবে সন্দেহভাজন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিভাগের ছয় কর্মচারী হলেনÑমিনটু, জোসেফ, বাদল, বারী, ফয়সাল ও আয়েশা। তারা সবাই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী।
গত ২৮ অক্টোবর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব নাদির হায়দার ১৭টি নথি গায়েব হওয়ার বিষয়ে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এতে সচিবালয়ের নিচতলার স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের একটি কক্ষ থেকে ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েব হওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়।
জিডি দায়েরের পরপরই সিআইডির ক্রাইম সিন ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত সংগ্রহ ও নথি সংরক্ষণ করে রাখা আলমারি থেকে আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করে। শুক্রবার ও শনিবার মন্ত্রণালয় বন্ধ থাকায় গতকাল সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্যরা সন্দেহভাজন ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর আঙুলের ছাপ নিয়েছেন।
সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, আলমারিতে থাকা আঙুলের ছাপের সঙ্গে সন্দেহভাজনদের আঙুলের ছাপ মিলিয়ে দেখা হবে। এজন্য সন্দেহভাজন কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।