নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে হাতপাখা-হারিকেন নিয়ে রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ করেছে বিএনপি। গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই সমাবেশে ঢাকার কেরানীগঞ্জ, ধামরাই, সাভার, নবাবাগঞ্জ ও দোহার থানা থেকে নেতা-কর্মীরা যোগ দিয়েছিলেন। তারা সরকারবিরোধী নানা সেøাগানে লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদ জানান। লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভের অংশ হিসেবে ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ সমাবেশ হয়।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজকে ঢাকায় যারা আছেন, কিছুটা ভালো আছেন। কিন্তু গ্রামের মানুষ আরও কষ্টে আছে। সারাদিনে গ্রামে চার-পাঁচ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে না। এই গরমের দিনে কী কষ্টে আছে মানুষ বুঝুন। তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুতের অভাব দেখিয়ে, জ্বালানি তেলের অভাব দেখিয়ে সারকারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। কোথায় পাবে মানুষ সার? কীভাবে দেশের কৃষির উন্নয়ন হবে, আমার কোটি কোটি কৃষক বাঁচবে কীভাবে?
নজরুল ইসলাম খান বলেন, রেকর্ড বলছে যে, বাংলাদেশে আট বছরের যে বাজেট তার চেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করা হয়েছে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের জন্য। বলা হয়েছিল, আমাদের যা বিদ্যুৎ প্রয়োজন, তার চেয়ে ডাবল আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা হয়ে গেছে, আমরা বাইরে বিদ্যুৎ রপ্তানি করব। অথচ আমরা দেখলাম রপ্তানি নয়, আরও বিদ্যুৎ আমদানির জন্য অনেক বেশি টাকায় আদানি গ্রুপের (ভারত) সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে।
কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্টকে ‘আজব’ বলে অভিহিত করে নজরুল বলেন, এই কুইক রেন্টালের নামে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা জনগণের পকেট কেটে কিছু ব্যক্তিকে দেয়া হচ্ছে। আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা এতই যদি বেশি, তাহলে কেন এত বেশি টাকা দিয়ে আমরা কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের চুক্তি বারবার বাড়াচ্ছি? এমনকি আইন করা হয়েছে সংসদে যে, এসব দুর্নীতি-অনাচারের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে আপনি মামলা করতে পারবেন না।
সরকার আবারও ক্ষমতায় আসতে আগামীতে ইভিএমে ‘ভোট লুটপাট’ করার ‘চক্রান্ত’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা নজরুল। তিনি বলেন, তারা ক্ষমতায় থেকে ভোট চুরি করেছে, ডাকাতি করেছে, এবার তারা ইভিএমের নামে লুট করতে চায়। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, কিছুতে দেয়া হবে না, কোনোমতেই না। এদেশটা আমরা লিজ দিইনি কাউকে। এদেশ আমাদের, এ দেশকে আমরা বাঁচাব ইনশাল্লাহ।
ঋণখেলাপিদের সুবিধা দেয়ার সমালোচনা করে নজরুল বলেন, তাদের এ সুবিধা দেয়ার অর্থটা কী? এটা জনগণ মানতে রাজি নয়। যারা ‘অন্যায়ভাবে’ অর্থ উপার্জন করছে, বিদেশে ‘পাচার’ করছে, দেশটাকে ‘ফোকলা’ করে দিচ্ছে, সরকার তাদের পক্ষে বলেও অভিযোগ নজরুলের।
বিএনপিকে জনগণের ‘পক্ষের’ দল দাবি করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, জনগণের যে আজকে কষ্ট, আজকে তাদের যে দুর্গতি, তাদের যে সংকট, তাদের পাশে থেকে তাদের সঙ্গে নিয়ে মোকাবিলার জন্য এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশকে বসবাসযোগ্য এবং দুর্নীতিমুক্ত তরতে ‘ফাঁকা বেলুনের’ মতো নয়, টেকসই উন্নয়নে এগিয়ে আসতে তরুণ প্রজšে§র প্রতি আহ্বান জানান নজরুল। আর এ কাজে ‘গণবিরোধী অনির্বাচিত’ সরকারের পতন ঘটিয়ে ‘নির্বাচিত’ সরকার প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেন।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাকের পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, জেলার নেতা নাজিম উদ্দিন মাস্টার ও মোজাদ্দেদ আলী বাবুও বক্তব্য রাখেন।