হার্ট ফেইলিওরের চিকিৎসা

হার্টের মূল কাজ হলো, শরীরের প্রতিটি কোষে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও খাদ্য সরবরাহ করা। এ জন্য পাম্পিং শক্তি কার্যকর থাকা চাই। আর পাম্প করতে হলে সুস্থ ও শক্তিশালী মাংসপেশি আবশ্যক। মাংসপেশি কাজ করতে গেলে আবার করোনারি ধমনি সচল ও বাধাহীন থাকতে হবে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল ইত্যাদির কারণে ধমনির গাত্র অমসৃণ ও চর্বির দলা জমে বিভিন্ন স্থানে বাধা বা ব্লক তৈরি হতে পারে। ফলে হƒৎপিণ্ডের মাংসপেশি প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। একপর্যায়ে হƒৎপিণ্ড সারা শরীরের রক্ত সরবরাহের চাহিদা পুরোটা মেটাতে ব্যর্থ হয়। এ ব্যর্থতাকেই হার্ট ফেইলিওর বলে।

চিকিৎসা কী: আকস্মিক হার্ট ফেইলিওর: হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বা বুকে তীব্র ব্যথার সঙ্গে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে দ্রুত রোগীকে কাছাকাছি কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তবে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই কিছু ওষুধপত্র চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োগ করা যেতে পারে। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর অক্সিজেন দেয়া দরকার। একটি ইসিজি দেখেই বোঝা যায় রোগীর হার্ট অ্যাটাক হলো কিনা। কখনও ইসিজির পরিবর্তন দেরিতে আসে। সে ক্ষেত্রে রক্তের ট্রপোনিন পরীক্ষা করা হয়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা হলো, দ্রুত এনজিওগ্রাম করে হার্টের ব্লক খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা।

ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি হার্ট ফেইলিওর: ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি হার্ট ফেইলিওর চিকিৎসার প্রধান চারটি অংশ। চিকিৎসকের পরামর্শে বিটা ব্লকার জাতীয় ওষুধ নিয়মিত ব্যবহার করা। এমআরএ ব্লকার ও সবশেষ সংযোজন এসজিএলটি ২ ইনহিবিটর ব্যবহার করা।

হার্ট ফেইলিওরের চিকিৎসায় এ গ্রুপের ওষুধগুলো এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। যদিও শেষেরটি ডায়াবেটিস চিকিৎসায় প্রথম ব্যবহার হতে শুরু করে, কিন্তু যাদের ডায়াবেটিস নেই কিন্তু হার্ট ফেইলিওর আছে, তারাও এটি সমানভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।

চূড়ান্ত হার্ট ফেইলিওর: যখন উপরোক্ত চিকিৎসা সত্ত্বেও রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন না, তাদের জন্য আরও কিছু ব্যয়বহুল চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। যেমনÑ

#       এআইসিডি, যা এক ধরনের শক দেয়ার পেসমেকারসদৃশ যন্ত্র। এটি বুকের কণ্ঠাস্থির নিচে সামান্য কেটে চামড়ার নিচে বসিয়ে দেয়া হয়। এটি রোগীকে এরিদমিয়াজনিত হঠাৎ মৃত্যু থেকে শক দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে।

হ       সিআরটি-ডি, যা এআইসিডি যন্ত্রের মতো একইভাবে চামড়ার নিচে বসিয়ে দেয়া হয়। এটি হার্টের সমন্বয়হীন সংকোচন-প্রসারণকে সমন্বিত করে পাম্পিং ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

#    এলভিএডি, যা হার্টের ভেতরে ছোট একটি অস্ত্রোপচার করে বসিয়ে দেয়া হয়। সাধারণত হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের জন্য অপেক্ষমাণ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

#       পাশাপাশি নিয়মিত ৩০ মিনিট হাঁটা, ধূমপানসহ তামাকজাত দ্রব্য বর্জন করা, দৈনিক পানীয়ের পরিমাণ ১০০০-১২০০ মিলি রাখা, উত্তেজনা পরিহার করা, রাতে ৬ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল অবশ্যই পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

ডা. মাহবুবুর রহমান

সিনিয়র কনসালট্যান্ট, কার্ডিওলজি ও ইনচার্জ সিসিও

ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০