শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও হার মানেননি আরজিনা খাতুন। অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে ২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে ৪.৮৩ পেয়েছিলেন।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর মাহাতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এ কৃতী শিক্ষার্থীর সেই সাফল্যে শিক্ষক-সহপাঠী ছাড়াও উচ্ছ্বসিত হয়েছিল স্থানীয় এলাকাবাসী ও তার পরিবার। বানিয়াপাড়া এলাকার মাঝি মো. মজনু বিশ্বাসের অভাবের সংসারে মেয়ে আরজিনার পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এ নিয়ে স্থানীয় পত্রিকাসহ অনলাইন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নজরে আসে বিষয়টি। এরপর আরজিনাকে মাসিক পড়ালেখার জন্য এক হাজার করে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন। সে সময় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বলেন, তার পড়ালেখার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক হাজার করে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমি যদি নাও থাকি, পরবর্তীকালেও সে যেন অনুদানটি পেতে পারে িসে ব্যবস্থা করেছি।
বড় বোন মুসলিমা জানান, জন্মের পর থেকেই আরজিনার দু’পায়ের পাতা থেকে হাঁটু পর্যন্ত বাইরের দিকে বাঁকা। আর ডান হাতের তালু পর্যন্ত থাকলেও ছোট ছোট আঙুল দিয়েই লেখাপড়া চালিয়েছে নিজের চেষ্টায়। এ কারণে আরজিনা আর দশটা মেয়ের মতো নয়। তবে শৈশব থেকেই পড়ালেখায় ছিল ব্যাপক আগ্রহ। আরজিনা জানান, পড়ালেখার প্রতি আমার প্রবল ইচ্ছা ছিল। কিন্তু অভাবের তাড়নায় হয়তোবা আমার আর পড়ালেখা হতো না। ডিসি স্যার আমাকে প্রতি মাসে এক হাজার করে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এতে আমার খুবই ভালো লাগছে। আমি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই। পরিবারের বোঝা হতে চাই না। পড়ালেখা শিখেই আমি পরিবারকে সহযোগিতা করতে চাই।
কুষ্টিয়ার বর্তমান জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান তার লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এসএসসি পাসের পর কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে অনার্সে ভর্তি হয়েছেন আরজিনা। এরই মাঝে কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণের জন্য শহর সমাজসেবা অধিদফতরে যোগাযোগ করেন আরজিনা। সেখানকার কর্মকর্তা শহর সমাজসেবা অফিসার কেকেএম ফজলে রাব্বী তাকে বিনা খরচে ছয় মাসের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন। যাতায়াত বাবদ সম্মানী ভাতার ব্যবস্থা চালু করেন। ইতোমধ্যে শহর সমাজসেবা অফিসের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেছেন আরজিনা।
কুদরতে খোদা সবুজ
