নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: রুই-কাতল-মৃগেল মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও নিষিক্ত ডিম সংগ্রহের জন্য বিখ্যাত হালদা নদীর মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ঠেকাতে ম্যাক পেপার ও বোর্ড মিল বন্ধ ঘোষণা করেছে পরিবেশ অধিদফতর। গতকাল পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক মো. আজাদুর রহমান মল্লিক সাময়িক বন্ধের এ ঘোষণা দেন।
পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরের অক্সিজেন মোড়ের বায়েজিদ বোস্তামী সড়কের ম্যাক পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস ১৯৯৪ সাল থেকে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু পরিবেশ ছাড়পত্র ও ইটিপি ব্যবস্থা ছিল না। আর এ কারণে কারখানাটির অপরিশোধিত তরল বর্জ্যে হালদা দূষণের দায়ে বিভিন্ন সময় পরিবেশ অধিদফতর ৪৯ লাখ চার হাজার ২২৪ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে গত ফেব্রুয়ারির মধ্যে অন্য কোনো শিল্পাঞ্চলে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ অন্যত্র স্থানান্তর করতে না পারায় ইটিপি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি পরিদর্শনে পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা ইটিপি নির্মাণের কোনো কার্যক্রম দেখতে পাননি। এ সময় কারখানা কর্তৃপক্ষ আরও সময়ের প্রয়োজন বলে মৌখিকভাবে অবহিত করে। কিন্তু তা অগ্রহণযোগ্য ও আইনের লঙ্ঘন বলে পরিবেশ অধিদফতর জানায়।
অধিদফতরের পরিচালক মো. আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, হাটহাজারী, অক্সিজেন বাইপাস এলাকায় অনন্যা আবাসিক এলাকার মাস্টার ড্রেন নির্মাণে বামনশাহী খালটি বন্ধ করায় ম্যাক পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডসহ বায়েজিদ এলাকার সব তরল বর্জ্য আগে কর্ণফুলী নদীতে পড়লেও এখন খন্দকিয়া খাল হয়ে হালদায় পড়ছে। এতে হালদা ব্যাপকভাবে দূষণের শিকার হয়। যা নিয়ে এলাকাবাসী অনেক অভিযোগ ও আন্দোলন করে।
তিনি জানান, পরিবেশ ছাড়পত্র ও ইটিপি ছাড়া কারখানা চালিয়ে হালদা নদী দূষিত করায় বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৫৫ (সংশোধন, ২০১০)-এর ৭ ও ১২ ধারা লঙ্ঘন করায় ম্যাক পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড ইটিপি নির্মাণ ও ছাড়পত্র না নেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে।
উল্লেখ্য, শিল্পবর্জ্যরে দূষণে বিপর্যস্ত হালদা নদীকে দূষণের হাত থেকে বাঁচানোর দাবিতে গত শনিবার মানববন্ধন করেছে হালদাপাড়ের হাজার হাজার মানুষ। এতে হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার দক্ষিণ মাদার্শা, শিকারপুর, উত্তর মাদার্শা, উরকিচর ও বুড়িশ্চর ইউনিয়নের বাসিন্দারা অংশ নেন। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে পরিবেশবাদী সংগঠন হালদা রক্ষা কমিটি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।
