Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 10:02 am

হালনাগাদ হচ্ছে না বন্ধকি সম্পত্তির অগ্নিবিমা

শেখ আবু তালেব: ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হলে জামানত রাখতে হয়। বাণিজ্যিক ঋণের বেলায় অগ্নিঝুঁকির বিমা করা বাধ্যতামূলক, যাতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনায় বিমা কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ মেলে। কিন্তু সম্প্রতি অধিকাংশ ব্যবসায়ী এসব বিমার মেয়াদ শেষ হলেও তা নবায়ন করছেন না। এতে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ব্যাংকের বিনিয়োগ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি শেষে দেশের ব্যাংক খাতে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১৩ লাখ সাত হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতের অধিকাংশ ঋণই উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ব্যাংক, বিমা ও ব্যবসায়িক সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ঋণের বিপরীতে বন্ধকি জামানত হিসেবে রাখা সম্পত্তি, কারখানা, ভবন, মেশিনারিজ ও গুদামজাত পণ্যের অগ্নিঝুঁকির বিমা করা বাধ্যতামূলক।

ঋণ মঞ্জুরের আগে ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয় গ্রাহক বন্ধকি সম্পত্তি বা পণ্যের বিপরীতে বিমা করেছেন কি না। বিশেষ করে অগ্নিঝুঁকির বিমাটি নিশ্চিত করা হয়।

বিমা হালনাগাদ হওয়ার সংখ্যা কমে যাওয়ার সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেন রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. খালেদ মামুন। তিনি জানান, সাধারণত অগ্নিবিমার পরিমাণই বেশি হয় আমাদের দেশে। এর বাইরে বিভিন্ন দুর্যোগ ও দুর্ঘটনাজনিত কারণেরও বিমা করা হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের এ সময়ে মেয়াদোত্তীর্ণ বিমাগুলোর অধিকাংশেরই নবায়ন হচ্ছে না। আমরা গ্রাহককে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছি। এর বাইরে আমাদের করার কিছুই নেই।

এ বিষয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ওসমান আলী শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিয়মিত তদারকি করছি। গ্রাহক ও ব্যাংকের স্বার্থের কারণেই এটি করা হয়। ঋণগ্রহীতার সম্পদের অগ্নিবিমাসহ সব ধরনের বিমার মেয়াদ সময়ে সময়ে হালনাগাদ করার বিষয়টি এই দুঃসময়েও আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। শাখাগুলোকে নির্দেশনা দিচ্ছি।

জানা গেছে, বিমা করলে ব্যাংক নিশ্চিত হয়, দৈবাৎ কোনো কারণে দুর্ঘটনা বা অগ্নিকাণ্ড ঘটলে গ্রাহক বিমা কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পায়। এতে গ্রাহকের বাণিজ্যিক কার্যক্রম আবার দ্রুত শুরু করা সম্ভব হয়। ব্যাংকও নিরাপদে থাকে তাদের বিনিয়োগ নিয়ে।

কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) কারণে বিমাগুলো হালনাগাদ করা হচ্ছে না। এ তালিকায় রয়েছে বড় বড় ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানও। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে এ প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।

সূত্র জানিয়েছে, বিমার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নবায়ন করতে হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের দিনই যদি কোনো অগ্নিকাণ্ড বা কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে গ্রাহক এক টাকাও ক্ষতিপূরণ পাবেন না।

বিমা হালনাগাদ না হওয়ায় উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে ব্যাংক খাতের পুরো ঋণ। একাধিক ব্যাংকার ও বিমা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।

বিষয়টিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংক ও গ্রাহক নিজ নিজ স্বার্থেই সব ধরনের বিমা ও তা নবায়ন করে থাকে। করোনার প্রাদুর্ভাব চলাকালে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য ব্যবসায়ীদের উচিত হবে যথাসময়ে বিমাগুলো নবায়ন করা। ব্যাংকও তার প্রয়োজনেই এগুলো তদারকি করবে।’

এ বিষয়ে বিমা কর্মকর্তারা জানান, বিমা করার পর থেকে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত এর ঝুঁকি বিমা কোম্পানি বহন করে। এ সময়ে প্রাকৃতিক বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে অগ্নিকাণ্ড হলে গ্রাহক ক্ষতিপূরণ পায়। এ ক্ষতিপূরণ বিমা কোম্পানি বহন করে।

বিমা হালনাগাদ কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ইসলামী তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. আজিজুল ইসলাম জানান, করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে ব্যবসায়ীরা সম্পদের মেয়াদোত্তীর্ণ বিমার নবায়ন কমিয়ে দিয়েছে। বড় কিছু ব্যবসায়ী গ্রুপ নিজ প্রয়োজনেই করছে। বাকিরা করছে না। গত দুই মাসে ৫০ শতাংশের মতো মেয়াদোত্তীর্ণ বিমার হালনাগাদ করা হয়নি।