হাসপাতালে নারীর চিকিৎসা গ্রহণের হার বেশি: চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুরুষের মৃত্যুহার বেশি

 

নাজমুল হুসাইন: দেশের হাসপাতালগুলোয় সেবা গ্রহীতাদের ৬০ শতাংশই নারী। কিন্তু হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর হার এর প্রায় বিপরীত। হাসপাতালগুলোয় মোট মৃতদের ক্ষেত্রে ৫৮ শতাংশ পুরুষ আর ৪২ শতাংশ নারী। প্রাথমিক সেবাদানকারী হাসপাতালগুলোয় যেমন বাড়ছে নারীর উপস্থিতি, তেমনই কম বড় বা বিশেষায়িত টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতালে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বার্ষিক প্রতিবেদন ‘হেলথ বুলেটিন ২০১৬’এ উঠে এসেছে এমন চিত্র। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমানে দেশে প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারিÑএ তিন পর্যায়ের স্বাস্থ্য স্থাপনা বা হাসপাতালে  রোগীর সংখ্যা বিচিত্র। সেখানে প্রাইমারি পর্যায়ে দেশের কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত আসা রোগীর মধ্যে ৬৩ দশমিক শূন্য এক শতাংশই নারী। অর্থাৎ এসবে পুরুষ রোগী মাত্র ৩৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ। সেকেন্ডারি পর্যায়ে জেলা হাসপাতালগুলোয় ৫৪ দশমিক ছয় শতাংশ নারী আর ৪৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ পুরুষ। তবে উল্লেখযোগ্য রোগীর ব্যবধান চোখে পড়ে টারশিয়ারি পর্যায়ের বিশেষায়িত বা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মতো বড় হাসপাতালে। এ ক্ষেত্রে অসুস্থদের মধ্যে ৫৩ দশমিক ৯৫ শতাংশই পুরুষ, বাকি ৪৬ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ নারী।

অপরদিকে সরকারি হাসপাতালে ওই বছরের (২০১৫) রোগী মৃত্যুর পরিসংখ্যানও দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে এ সময় ৫৭ লাখ ১১ হাজার ৬৪১ রোগী ভর্তি হন। তাদের মধ্যে মারা যান এক লাখ পাঁচ হাজার ৮৫৬ জন। মৃতদের ৫৮ শতাংশ পুরুষ ও ৪২ শতাংশ নারী। যদিও নারী মৃত্যুর প্রধান কারণ গর্ভপাতজনিত। আর পুরুষের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ও বড় ধরনের রোগ।

প্রাথমিক স্তরের হাসপাতালগুলোয় নারীর উপস্থিতি বেশি হওয়ার সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক সালেহা বেগম চৌধুরী। অবস অ্যান্ড গাইনি বিশেষজ্ঞ এই অধ্যাপক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নারীর ক্ষেত্রে শুধু গর্ভধারণ প্রক্রিয়ায় একজন নারীকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। সচেতনতা বাড়ায় এ সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। আর প্রাথমিক চিকিৎসাক্ষেত্রগুলোতেই ওই বৃহৎ অংশের নারীরা সেবা গ্রহণ করেন। অপরদিকে আর্থিক দুর্বলতার কারণে নারীরা বড় হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পান না।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থিক দুর্বলতার কারণে বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা উপেক্ষিত বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া নারীর গর্ভধারণ পর্যায়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার হার অনেক বেশি। অপরদিকে নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশিদিন বাঁচেন। অসংখ্য পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিভিন্ন জৈবিক ও স্বাস্থ্যগত কারণে এমনটা হয়।

হেলথ বুলেটিনের তথ্যে, ২০১৫ সালে মেডিক্যাল কলেজ, বিশেষায়িত, জেলা সদর, উপজেলা, ইউনিয়ন ও কমিউনিটি ক্লিনিকসহ ১৬ হাজারেরও বেশি সরকারি চিকিৎসা স্থাপনায় বহির্বিভাগে ১৭ কোটি ৮৬ লাখ ৯৭ হাজার ৯৫৮ নারী-পুরুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। যার মধ্যে ১০ কোটি ৭৯ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮০ জনই নারী। আর তাদের মধ্যে শতকরা ৮৯ ভাগ রোগী প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা ১৬ হাজার ৮৭টি চিকিৎসাকেন্দ্রে সেবা নিয়েছেন।

অপরদিকে ওই বছর দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোয় জরুরি বিভাগে সেবাগ্রহীতা ৭৪ লাখ ২৫ হাজার ৫৪১ জন। বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি  রোগীর সংখ্যা ৫৭ লাখ ১১ হাজার ৬৪১। এর মধ্যে এক লাখ পাঁচ হাজার ৮৫৬ জন মৃত্যুবরণ করেন। অর্থাৎ সে বছর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল এক দশমিক ৮৫ শতাংশ।

বুলেটিনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে রোগীদের উপজেলা হাসপাতালে ভর্তির কারণ দুর্ঘটনা, আঘাত, বিষপান, ফাঁস দেওয়াসহ অন্যান্য। এসব কারণে সেখানে হারও সবচেয়ে বেশি। জেলা পর্যায়ে হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তির কারণ ডায়রিয়া। এসব হাসপাতালে এ বয়সীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হƒদরোগ। আর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির প্রধান কারণও একইভাবে দুর্ঘটনা, আঘাত, বিষপান, ফাঁস দেওয়াসহ অন্যান্য। আর মৃত্যুর প্রধান কারণ স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ।

২০১৫ সালে দেশে সেকেন্ডারি পর্যায়ের হাসপাতালে এক কোটি ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৩২ জন ও টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতালে ৮৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪৯ জন চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন। বহির্বিভাগে চিকিৎসা গ্রহণকারীদের মধ্যে মেডিক্যাল কলেজে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ৭০০, জেলা সদর হাসপাতালে ৬০০ ও উপজেলা হাসপাতালে ২০০ জন চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন।

বিএসএমএমইউ’র সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, ‘হাসপাতালগুলোয় ডেথ অডিট বা মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ অনুসন্ধান করা হয় না। সব মৃত্যুর ক্ষেত্রে তা করা সম্ভব হলে মৃত্যুর কারণ আরও স্পষ্ট হতো এবং সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনা যেত।’

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০