জার্মানির একটি শহর ব্রান্সউইক। প্রাচীন শহর এটি। ধারণা করা হয়, শহরটির পত্তন হয়েছিল ৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে। তাই শহরটির একটি অংশজুড়ে রয়েছে কেবল প্রাচীন দালানকোঠা। অন্য অংশটি অবশ্য নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোও সব নতুন অংশেই পড়েছে। এ দুই অংশের মাঝামাঝি জায়গায় একটা অভিজাত বাড়ির ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। ২০০১ সালে সেই ধ্বংসাবশেষের ওপরেই গড়ে উঠেছে এ হাসি-খুশি হাউজ।
হাসি-খুশি বাসা বলার কারণ, বাসাটা দেখলে যে কারও মন ভালো হয়ে যেতে বাধ্য। কারও মন খারাপ হলে এ বাসার দিকে তাকালে মন ভালো হয়ে যায়। এমনকি মুখে হাসি লেগে যেতেও সময় লাগে না। এ অদ্ভুত বাসাটিতে তিনটি দালান রয়েছে। দালানগুলো উদ্ভট আকৃতির। আর সবগুলোতেই অদ্ভুতুড়ে সব ছবি আঁকা। মূল দরজার ওখানে অনেকগুলো হৃদয় আঁকা রয়েছে। দেওয়ালের এখানে-ওখানেও আছে হৃদয়। আর একেক জানালার আশেপাশে মুখের একেকটা অংশ। কোথাও ঠোঁট, কোথাও নাক, কোথাও চোখ ও কোথাও দাঁত রয়েছে। কোনোটা গোল, কোনোটা চ্যাপ্টা, কোনোটা লম্বা, কোনোটা বাঁকা, কোনোটা ছোট, কোথাও আবার একসঙ্গে অনেক জানালা। সব মিলিয়ে অদ্ভুত সুন্দর এ হাসি-খুশি বাড়িটি।
এ হাসি-খুশি বাসার নাম হ্যাপি রিজ্জিহাউজ। বাড়িটার নামকরণ করা হয়েছে মার্কিন চিত্রকর জেমস রিজ্জির নামে। তিনি বিখ্যাত তার পপ ধারার কাজের জন্য। অনেকের কাছে মনে হয়েছে, তার নামে কেন বাসাটার নামকরণ করা হয়েছে? কারণ হচ্ছে, এ অদ্ভুতুড়ে চেহারার বাসাটা তারই মস্তিষ্কপ্রসূত। একদিন রিজ্জি আড্ডা দিচ্ছিলেন ওলাফ জাস্কের সঙ্গে। ওলাফ একটি শিল্প-গ্যালারির মালিক। তার সঙ্গে গল্প করতে করতেই রিজ্জির মাথায় এমন একটা বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা আসে। প্রথমে তিনি বাড়িটা বানাতে চেয়েছিলেন শহরটির ঐতিহাসিক স্থান ম্যাগনা কার্টাতে।
তার এ প্রস্তাব শুনে শহরের বয়স্করা একেবারে হায় হায় করে উঠল। ব্রন্সউইকের মতো প্রাচীন একটি শহরে এমন কার্টুন-মার্কা বাসা বানানো হবে! তাও আবার ম্যাগনা কার্টাতে! রিজ্জি তখন স্থান বদলে নিয়ে এলেন এখনকার জায়গায়। বৃদ্ধদের আপত্তির মধ্যেও তিনি ঠিকই অনুমতি পেলেন। তার পরিকল্পনা আর ভেস্তে গেল না। এর মূলে তরুণদের উৎসাহ ছিল। জার্মানিতে জেমস রিজ্জি তখনও বেশ বিখ্যাত। কিন্তু এমন বাড়ি তো আর যে কেউ বানাতে পারবে না; চাই যোগ্য স্থপতি। সে দায়িত্ব দেওয়া হলো কনরাড ক্লস্টারকে। বছর দুই সময় লাগিয়ে ক্লস্টার পরিকল্পনামাফিক তিনটি দালান নির্মাণ করে ফেললেন। বাকিটুকু রিজ্জির কাজ। তিনি ভবন তিনটি গ্রাফিতি দিয়ে ভরে তুললেন। তৈরি হয়ে গেল হাসি-খুশি বাসা রিজ্জিহাউজ।
দেড় যুগ পেরোতে না পেরোতেই এ রিজ্জিহাউজই ব্রান্সউইকের সবচেয়ে বড় প্রতীকে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এ বাড়িটি দেখার জন্য এখানে আসেন।
হাসি-খুশি বাড়ি
