প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৫১ জন নিহতের ঘটনায় শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ চেয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেমের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৪৯টি মামলা দায়ের হয়েছে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের উপমহাপরিদর্শক সৌমেন বড়–য়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘২ থেকে ৩ দিন আগে সর্বশেষ মামলাটি করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ৪৯ জন শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ চেয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক নেছার উদ্দিন বাদী হয়ে ঢাকায় শ্রম আদালতে (তৃতীয়) মামলাগুলো করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো শ্রমিক যদি দুর্ঘটনায় মারা যান তাহলে তার পরিবারকে শ্রম আদালতের মাধ্যমে পাওনাগুলো পরিশোধ করতে হবে। আমরা তাদের গত আগস্টে নোটিস দিয়ে ছিলাম ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য। তবে এখন পর্যন্ত শ্রম আদালতের মাধ্যমে কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি কিংবা আমাদের অবহিত করেনি। সে জন্য তাদের বিরুদ্ধে প্রতিটি শ্রমিকের জন্য ৪৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
মামলার বাদী পরিদর্শক নেছার উদ্দিন বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত ৪৯ জন শ্রমিকের জন্য পৃথক পৃথক মামলা করা হয়েছে। তবে পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর অন্যান্য শ্রমিকের নামেও মামলা করা হবে। ৩ দিনে পর্যায়ক্রমে ৪৯টি মামলা করা হয়েছে। মামলায় আসামি হলেন কারখানা মালিক আবুল হাসেম।’
ক্ষতিপূরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শ্রম আইন অনুযায়ী যদি শ্রমিকের মৃত্যু হয় তাহলে শ্রম আদালতের মাধ্যমে শ্রমিকদের ২ লাখ টাকা করে দিতে হয়। এছাড়া আহত শ্রমিকদেরও ক্ষতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যেমন শ্রমিক চিকিৎসা নিয়েছে সে ক্ষেত্রে মালিক চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবেন। আর যদি তাৎক্ষণিকভাবে মালিক সেটি না করেন সে ক্ষেত্রে যে শ্রমিক আহত হয়েছেন পরবর্তীতে তিনি অভিযোগ করবেন খরচের টাকার পরিমাণ ও রিসিটসহ। তারপরও যদি মালিক চিকিৎসা খরচ না দেয় সে ক্ষেত্রে সে মামলা করতে পারবে।’
আমরা আদালতে অভিযোগ দাখিল করেছি। এখন আদালত পর্যায়ক্রমে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। তবে পরবর্তী তারিখ দেয়া হয়নি। সে ক্ষেত্রে আদালত থেকে জানানো হবে। এর আগে গত ১৫ জুলাই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অবহিত না করায় এবং ৩০ জুন শ্রম আইনের ৯টি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরও দুটি মামলা দায়ের করেন।
গত ৮ জুলাই বিকালে উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানার ১৪ নম্বর গুদামের ৬ তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক ভবন থেকে লাফিয়ে পরে ৩ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরদিন শুক্রবার বিকালে আগুন নিভিয়ে ফেলার পর ৪৮ জনের পোড়া মরদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানাধীন ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেমসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে নিরাপত্তা না থাকাসহ বিভিন্ন অবহেলার অভিযোগ এনে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লিখিত আসামি কারখানার মালিক মো. আবুল হাসেমসহ তার চার ছেলে ও ডিজিএম, এজিএম ও ইঞ্জিনিয়ারসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের ৪ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালত থেকে কারখানার মালিক আবুল হাসেম, তার ৪ ছেলেসহ ৮ জন জামিনে বের হয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে মামলাটির তদন্তভার সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।