অ্যালিস ইন দ্য ওয়ান্ডারল্যান্ড, হ্যারি পটার কিংবা ঠাকুরমার ঝুলি পড়তে পড়তে শুনতে শুনতে আমরা কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যেতাম। যদি বইয়ের চরিত্রের সঙ্গে দেখা করা যেত! কী মজাই না হতো! এমন ইচ্ছা এবার কিছুটা হলেও পূরণ হবে। গ্রন্থাগার থেকে বইয়ের বদলে মানুষ ভাড়া করে তার অভিজ্ঞতা শোনা যাবে।
হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। হিউম্যান লাইব্রেরি থেকে ২০ মিনিটের জন্য একেকজন মানুষরূপী বই ধার নেওয়া যাবে। তাকে প্রশ্ন করা যাবে। অর্থাৎ জ্ঞান আসবে মানুষের মুখ থেকে। তার জীবনের অভিজ্ঞতা শোনা যাবে।
সমাজে পরিবর্তন আনতে ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে সংলাপ চালু করতে ২০০০ সালে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে এমন গ্রন্থাগার চালু করেন রোনি অ্যাবেগেইল ও তার ভাই ডেনি অ্যাবেগেইল। ১৯৯৩ সালের এক রাতে তাদের এক বন্ধু ছুরির আঘাতে মারাত্মকভাবে জখম হন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় বন্ধুটি। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে উপায় খুঁজতে থাকেন বন্ধুরা। ডেনমার্কের তরুণদের সহিংসতা থেকে দূরে রাখতে ‘স্টপ দ্য ভায়োলেন্স’ নামে সংগঠন গড়ে তোলেন তারা। অল্প সময়ে সেখানে ৩০ হাজার সদস্য জুটে যায়। ২০০০ সালে এ সংগঠন কোপেনহেগেনে রোসকিল্ড ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করে। এখানে আত্মপ্রকাশ করে হিউম্যান লাইব্রেরি। মানবিক অভিজ্ঞতার সেই মহৎ উদ্যোগ ডেনমার্ক পেরিয়ে বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এক জরিপে জানা যায়, বিশ্বের ৮০টি দেশে এমন গ্রন্থাগার রয়েছে। ২০০৬ সালে প্রথম স্থায়ী হিউম্যান লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয় অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের লিজমোর শহরে।
দিল্লি চ্যাপ্টার
হিউম্যান লাইব্রেরির ধারণা পুরোনো হলেও ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে চালু হতে যাওয়া এরই একটি ইভেন্ট বেশ আলোড়ন তুলেছে উপমহাদেশে। যদিও দিল্লির আগে হায়দরাবাদে যাত্রা শুরু করেছিল হিউম্যান লাইব্রেরি।
আগামীকাল (১৮ জুন) দিল্লির জনপ্রিয় কনট প্লেসে হিউম্যান লাইব্রেরি ইভেন্টের আসর বসবে। বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এ অনুষ্ঠান চলবে। ধারণা করা হচ্ছে, ইভেন্টে ৫০০ থেকে ৬০০ মানুষ অংশ নেবেন। অংশগ্রহণকারীরা ১১ জন হিউম্যান বুক-এর মধ্য থেকে পছন্দমতো ব্যক্তিকে বেছে নিতে পারবেন। প্রসঙ্গত, নানা অনলাইনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ১১ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন লাইব্রেরিকর্মীরা। বিভিন্ন গল্পে পূর্ণ তাদের ঝুলি। অংশগ্রহণকারীরা হিউম্যান বুকের সঙ্গে ২০ মিনিট সময় কাটানোর পরও অতিরিক্ত পাঁচ মিনিট সময় পাবেন। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে হিউম্যান লাইব্রেরির ইভেন্ট আমাদের রাজধানী কিংবা অন্য কোথাও বসবে। হিউম্যান বুকের সঙ্গে পরিচিত হতে পারব আমরাও।