হিট অ্যালার্ট আরও তিন দিন ১১ অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের ওপর দিয়ে চলতি এপ্রিল মাসজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল রোববার বিকাল ৩টায় যশোরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে রাজধানীতেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ২ ডিগ্রি। তীব্র দাবদাহে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষ। বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। ঘরের বাইরে তীব্র দাবদাহের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

দেশের ১১টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এর মধ্যে দুই জেলায় বইছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, রোববার যশোরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া খুলনায় ৪০, চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ৮, সাতক্ষীরায় ৪১ দশমিক ১, মোংলায় ৪০ দশমিক ৭, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৪০ দশমিক ৮ এবং পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

রোববার সকালে যশোর সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের ছিলমপুর গ্রামে আহসান হাবীব নামের এক স্কুলশিক্ষক রোদের মধ্যে ধান কাটতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। তিনি সদর উপজেলার আমদাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তার পরিবারের সদস্যদের ধারণা অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোক করে তার মৃত্যু হয়েছে।

স্কুলশিক্ষকের বাবা ইউসুফ আলী মোল্লা জানান, সকালে তার ছেলে আহসান হাবীব রোদের মধ্যে মাঠে ধান কাটছিলেন। এমন সময় তাকে রোদে ধান কাটতে নিষেধ করা সত্ত্বেও তিনি শোনেননি। পরে ধান কেটে বাড়িতে ফিরে আহসান হাবীব অসুস্থ বোধ করেন। এ সময় বাড়ির লোকজন তার মাথা, হাত ও মুখে পানি দেয়। এরপর তিনি স্কুলে যাওয়ার সময় আরও তীব্র অসুস্থ বোধ করলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি আরও জানান, পরিবারের সদস্যরা ধারণা করছেন হিট স্ট্রোকে আহসান হাবীবের মৃত্যু হয়েছে। কারণ তিনি কাজ করতে অভ্যস্ত ছিলেন না। রোদে কাজ করার পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার হার্টের সমস্যা ছিল, তবে খুব বেশি না।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন-অর-রশিদ বলেন, সকালে ওই স্কুলশিক্ষককে (আহসান হাবীব) মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন সকালে রোদের মধ্যে তিনি মাঠে কাজ করেছেন। স্বজনরা সন্দেহ করছেন, গরমে তার হিট স্ট্রোক হয়ে থাকতে পারে। তবে আমরা এখনও চূড়ান্ত রিপোর্ট পাইনি। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের ধারণা, তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা যেতে পারেন।

গতকাল রোববার ঢাকাসহ বেশিরভাগ জায়গার তাপমাত্রাই ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এছাড়া তিন দিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। রোববার সকালে আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (রোববার) ২৮ এপ্রিল থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অর্থাৎ ১ মে সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এই সময়ে জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। এর আগে গত ১৯ এপ্রিল শুক্রবার থেকে তিন দফা ৭২ ঘণ্টা করে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করে আবহাওয়া অফিস।

আজ ও কাল সিলেট ছাড়া দেশের আর কোথাও বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার বেলা ৩টা পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে যশোরে ৪২ দশমিক ২। এছাড়া ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকা অঞ্চলগুলো হচ্ছে রাজশাহীত রোববার ৪২, যা শনিবার ছিল ৪১ দশমিক ৫, চুয়াডাঙ্গায় রোববার কিছুটা কমে ৪১ দশমিক ৮, গতকাল ছিল ৪২ দশমিক ৭,  ঈশ্বরদীতেও রোববার তাপমাত্রা কমে দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ৩, শনিবার ছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সাতক্ষীরায় রোববার তাপমাত্রা বেড়ে ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি হয়েছে, শনিবার যা ছিল ৩৯ দশমিক ৪, কুমারখালী ও মোংলায় রোববার ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি। গোপালগঞ্জে ৪০ দশমিক ৬, শনিবার ছিল ৩৮ দশমিক ২; টাঙ্গাইলে রোববার ৪০ দশমিক ৩, শনিবার ছিল ৩৬ দশমিক ৬; ফরিদপুর রোববার ৪০ দশমিক ২, শনিবার ছিল ৩৮ দশমিক ৪; খুলনায় রোববার রোববার ৪০, শনিবার ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। এছাড়া ঢাকায় রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যা শনিবার ছিল ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর ও কুষ্টিয়ার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দিনাজপুর, রাঙামাটি, চাঁদপুর, ফেনী ও বান্দরবানসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।

আজ সোমবারের পূর্বাভাসে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। আগামীকাল মঙ্গলবারের পূর্বাভাস প্রায় একই কথা বলা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা বলেন, ‘তাপপ্রবাহ অব্যাহত আছে এবং থাকবে। আজকে আবারও তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এপ্রিল মাসে (২৯ ও ৩০ এপ্রিল) সিলেট ছাড়া আর কোথাও বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০