হিডেন চার্জ থেকে বাঁচুক ক্রেডিট কার্ড

 

গত কয়েক বছরে দেশে আমানতের সুদহার কমতে কমতে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। সঙ্গে কমেছে বিভিন্ন ধরনের ঋণের সুদহার। তবু সুদহার-সংশ্লিষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ওই পরিবর্তনের হাওয়া লাগেনি বলেই প্রতীয়মান। সেটি হলো ক্রেডিট কার্ড। অভিযোগ রয়েছে, অন্যান্য সুদহার কমার সঙ্গে সঙ্গে কমার বদলে কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছে ক্রেডিট কার্ড সুদহার। পাশাপাশি বেড়েছে আনুষঙ্গিক বিশেষ হিডেন চার্জগুলো। তার প্রভাবই বোধকরি পড়েছে কার্ডধারীর সংখ্যায়। খেয়াল করার মতো বিষয়, দেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবস্থা চালু হওয়ায় অল্পদিনেই এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে দ্রুততার সঙ্গেই এর গ্রাহকসংখ্যা পৌঁছে যায় ১০ লাখে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবমতে, সংখ্যাটি দ্রুত কমছে এখন প্রায় প্রতি মাসেই ১৫ থেকে ১৬ হাজার ব্যবহারকারী ক্রেডিট কার্ড জমা দিচ্ছেন ব্যাংকে। স্পষ্টত এমন প্রবণতার পেছনে রয়েছে উচ্চ সুদহার। এ বিষয়ে গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘ক্রেডিট কার্ডে সর্বোচ্চ সুদহার বাংলাদেশে’ শীর্ষক খবরটি আমাদের বিস্মিত না করে পারে না। সেখানে আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে দেশি ব্যাংকগুলোর প্রকাশ্য সুদহার অন্যান্য দেশের ব্যাংকগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। তার ওপর রয়েছে ২০ থেকে ৩০ রকমের ‘হিডেন চার্জ’। সব মিলিয়ে গড় সুদহার নাকি পড়ছে ৪০ শতাংশের বেশি। এদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ব্যাংকগুলোয় ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক সুদ হচ্ছে ১৮ থেকে ৩০ শতাংশ, মিয়ানমারে ১২ দশমিক ৮৪ থেকে ১৩ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১৯ দশমিক ৬৮ থেকে ২৪ শতাংশ ও চীনে ১৮ দশমিক ৫৫ থেকে ২৫ শতাংশ। কথা হলো, ওইসব দেশে ক্রেডিট কার্ডগুলোর প্রকৃত হার কত, তা নির্ণয়ে কিছু উপাদানকে সুদহারের সঙ্গে সমন্বয় করা প্রয়োজন। একই পদ্ধতি নিশ্চয় আমাদের বেলায়ও প্রয়োগ করতে হবে। সেগুলো না করেও কারও কারও মতে, অন্তত স্থানীয় ভুক্তভোগীদের মুখাবয়ব কল্পনা করেই অনায়াসে বলে দেওয়া যায় ক্রেডিট কার্ডে সুদহার নিয়ে যথেচ্ছাচার চলছে দেশে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্রিয়তাই প্রত্যাশা করবেন সবাই।

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে একজন গ্রাহক কতটা হয়রান হতে পারেন, তা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা ভালোই জানেন। কার্যত ‘ওভার লিমিট ফি’ কিংবা ‘লেট পেমেন্ট ফি’র মতো বিভ্রান্তিকর ও কঠোর আদায় প্রক্রিয়ার শিকার ব্যক্তিদের কেউ কেউ কার্ড ব্যাংকে ফিরিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়েছেন। কেউ কেউ আবার তা ফেরত দিতে না পেরে অভিযোগ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। প্রথম কথা হলো, ক্রেডিট কার্ড সার্ভিস একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সেবা। এর সুদহার নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো অমন দায়িত্বহীন আচরণ করছে কেন, তা খতিয়ে দেখা দরকার। একশ্রেণির প্রতিষ্ঠানের অনভিপ্রেত আচরণে এ ধরনের একটি সেবা বন্ধ হয়ে যাক, তা নিঃসন্দেহে কাম্য নয়। দ্বিতীয় প্রশ্ন, ক্রেডিট কার্ড সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির এত ঘাটতি কেন? এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যদি বিবেচনা থেকে থাকে নতুন একটি সেবা কিছুদিন দেখা যাক, পরে পদক্ষেপ নেওয়া যাবে; তাহলে বলতে হবে, দেশে ক্রেডিট কার্ড সেবা এরই মধ্যে অনেকটা পথ অতিক্রম করে ফেলেছে। বিষয়টি এখন আর কোনোভাবেই পরীক্ষামূলক পর্যায়ে নেই। ফলে এটিকে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা তথা গাইডলাইনের আওতায় আনা জরুরি। কাজটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আওতাভুক্ত বলেই আমাদের বিশ্বাস।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০