হিমোফিলিয়া একটি রক্তক্ষরণজনিত রোগ। এটি জিনগত রোগ, যা বংশানুক্রমে বাহিত হয়। মানবদেহে কোথাও কেটে গেলে রক্ত জমাট বাঁধার জন্য কিছু বিশেষ ব্যবস্থা আছে। রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় অণুচক্রিকার সঙ্গে কাজ করে বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টর বা উৎপাদক। এদের মধ্যে বিশেষ দুটি উপাদান কম মাত্রায় উৎপাদিত হলে রক্ত জমাট বাঁধতে সমস্যা হয়। এ রকম পরিস্থিতিতে সামান্য আঘাতে, এমনকি বিনা কারণেও রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। একেই বলে হিমোফিলিয়া। মূলত মেয়েরা এই রোগের বাহক, পুরুষেরা আক্রান্ত হয়। তবে খুব অল্প কিছু ক্ষেত্রে মেয়েরাও আক্রান্ত হতে পারে।
লক্ষণ: অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণই হিমোফিলিয়ার প্রধান লক্ষণ। অনেক শিশুর ক্ষেত্রেই দেখা যায় দাঁত পড়ার সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। খতনা করার পর অনেক সময় দেখা যায় রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছে না। অনেকের দেখা যায় হামাগুড়ি দেয়ার কারণে হাঁটু ফুলে যায়, অথবা সামান্য আঘাতে অস্থিসন্ধি ফুলে যায়। অস্ত্রোপচারের পর বা দুর্ঘটনাজনিত আঘাতের পর রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না। এভাবেই রোগটি ধরা পড়ে।
দীর্ঘদিন ধরে অস্থিসন্ধিতে রক্তক্ষরণের কারণে অস্থিসন্ধির কাজ করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া শরীরের অন্যান্য অংশেও রক্তক্ষরণ হতে পারে। এমনকি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে, যেটা খুবই মারাত্মক। এতে সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা না নিলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই সময় থাকতেই রোগটি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারলে এবং সে অনুযায়ী সতর্ক থাকলে মৃত্যুঝুঁকি কমানো যায়।
চিকিৎসা: হিমোফিলিয়ার স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই। শিরাপথে ইনজেকশনের মাধ্যমে ফ্যাক্টর শরীরে প্রবেশ করানোই মূল চিকিৎসা। এ ছাড়া এ রোগের চিকিৎসায় ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা ও ট্রানেকজ্যামিক অ্যাসিডও ব্যবহƒত হয়। রক্তক্ষরণের কারণে অস্থিসন্ধিতে সমস্যা দেখা দিলে ফিজিওথেরাপি নিতে হয়। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে এবং সাবধানতার সঙ্গে জীবনযাপন করলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব। সতর্কতা: শরীরে আঘাত লাগতে পারে, এ রকম কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ না করা, মাংসে ইনজেকশন না নেয়া, যেকোনো ধরনের অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া, ব্যথানাশক ওষুধ বা রক্ত তরল করে এ রকম ওষুধ (যেমন অ্যাসপিরিন) না খাওয়া প্রভৃতি।
ডা. গুলজার হোসেন
রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ
জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা