মাসুদ আনসারী: তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। মায়ের মুখের গল্প, মিডিয়ায় ভিডিও ফুটেজ এগুলো দেখে সে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো স্মৃতিপটে সংরক্ষণ করেছে। স্বাধীনতা ও বিজয়ের মাসে শহীদদের বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তাদের স্মরণ করেছে। কিন্তু এর মধ্য দিয়েই কি এ প্রজন্ম তৃপ্ত! হয়তো না। অনেকেরই ইচ্ছা নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে। ময়দানে শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে। বাস্তবে সেটি সম্ভব না হলেও ভার্চুয়াল জগতে তার সুযোগ করে দিয়েছে পোর্টব্লিস।
এই গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গেমসপ্রেমীদের সামনে হাজির করেছে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত ‘হিরোস অব ৭১’। ১৯৭১ সালে বরিশালের শামসু বাহিনীর হাত ধরে শনিরচর গ্রাম পাকহানাদার মুক্ত হয়। এ ঘটনাটিকে ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে গেমটি। মূল কাহিনী- বরিশালের শনিরচর গ্রামে পাকিস্তানি ক্যাম্প দখল এবং শত্রুর বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলে শামসু
বাহিনী। এ সময় দলের অন্যতম সদস্য সজল শহীদ হন। এতে বাহিনীর সবাই মর্মাহত। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে সহযোদ্ধার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে শপথ নেন এবং নতুন মিশনে পা বাড়ান। শনিরচর থেকে কিছু দূরে উল্লারহাটে একটি পাকিস্তানি টর্চার ক্যাম্পে কয়েকজন নারীকে অপহরণের পর বন্দি করে রাখা হয়েছে। এদের জীবিত উদ্ধার করা শামসু বাহিনীর সামনে চ্যালেঞ্জ। গেমটি খেলে এ চ্যালেঞ্জ জয় করতে পারলেই হওয়া যাবে সফল মুক্তিযোদ্ধা।
গেমটিতে থ্রিডি গ্রাফিকস ও অ্যানিমেশনের মাধ্যমে ১৯৭১-এর যুদ্ধকালীন পরিবেশকে গল্পের আকারেই তুলে ধরা হয়েছে। অ্যান্ড্রয়েড ও উইন্ডোজ উভয় প্লাটফর্মে তৈরি গেমটিতে এখন পর্যন্ত দুটি লেভেল যুক্ত করা হয়েছে। লেভেলগুলোতে উন্নত গ্রাফিকস, ভিজ্যুয়াল, দিন ও রাতের পরিবেশ এবং নতুন টেরাইনও যোগ করা হয়েছে। শামসু বাহিনীর সদস্যসংখ্যা পাঁচজন। প্রত্যেকের কাছে যুদ্ধের যাবতীয় অস্ত্র ও বেল্টে থাকে তিনটি করে গ্রেনেড। এ অস্ত্র ও গ্রেনেডগুলো ব্যবহার করেই গেমারকে জয় করতে হবে দুটি লেভেল। প্রথম লেভেলে অপহৃত নারীদের প্রাণহানি ছাড়া উদ্ধার করতে হবে এবং পরের লেভেলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ উড়িয়ে দিতে হবে।
‘হিরোস অব ৭১’ গেমটি ইতোমধ্যে তরুণ প্রজন্মের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এখন পর্যন্ত গুগল প্লে স্টোর থেকে ৮-৯ লাখ বার ইনস্টল হয়েছে গেমটি, যা বাংলাদেশি গেমগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
তরুণ প্রজন্ম এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার সুযোগ পাবে। একই সঙ্গে দেশকে নিয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগাবে গেমটি। এছাড়া এ গেম বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ এবং এদেশের মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গেমটির জন্য সরকারের আইসিটি বিভাগ থেকে ২০ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পোর্টব্লিস। পোর্টব্লিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং গেমের অন্যতম ডেভেলপার মাশা মুস্তাকিম জানান, মোবাইলে শুটার গেম আরও সহজে খেলার জন্য এখন অন্য ধরনের কিছু গেমস প্লে এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে কাজ করছি। আমরা সাধ্যমতো ভালো কিছু করার চেষ্টা করেছি। গেমটি নিয়ে দারুণ সাড়া পাচ্ছি। এতে অনুপ্রাণিত হয়ে ভবিষ্যতে দেশীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সমস্যাকে তুলে ধরে এমন গেম তৈরির পরিকল্পনা আমাদের আছে।