প্রতিনিধি, হিলি (দিনাজপুর): দিনাজপুরের হিলিতে প্রথমবারের মতো চিয়াসিড ও কেনোয়া চাষ শুরু হয়েছে। খরচ কম এবং লাভবান হওয়ায় উদ্যোক্তা শামিম খান ৪২ শতক জমির ওপরে পরীক্ষামূলকভাবে এটি চাষ শুরু করেছেন। ফলন ভালো হলে আগামীতে আরও বড় পরিসরে চাষাবাদ করার ইচ্ছে তার। নতুন জাতের এই শস্য চাষ দেখতে ভিড় করছেন এলাকাবাসী। এদিকে নতুন জাতের এই ফসল চাষে কৃষককে নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।
উদ্যোক্তা শামীম খান বলেন, বাংলাদেশে নতুন ফসল হিসেবে পরিচিত পেলেও এই ফসলের বেশ চাহিদা রয়েছে ইউরোপ-আমেরিকায়। সুপার ফুড নামে খ্যাত এই পণ্যটিতে একই সঙ্গে রয়েছে হাইপ্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন ও এন্টিঅক্সিডেন্ট। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। তাই বৈশ্বিক বাজারে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। কম খরচে মাত্র ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে এই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। এছাড়া অন্যান্য ফসলের তুলনায় সময়ও কম লাগে। তাই প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে সুপার ফুড খ্যাত কিনোয়া ও চিয়াসিড। দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় গ্রামের প্রভাষক শামিম খান ৪২ শতক জমির ওপর কিনোয়া ও চিয়াসিড চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে মাত্র ১০ হাজার টাকা। আর বিক্রির আশা রয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এতে সার প্রয়োগ করতে হয়েছে দুই টলি জৈব সার, ইউরিয়া ৫০ কেজি, ড্যাব ৩৫ কেজি, পটাশ ৩০ কেজি, জিবসাম ২৫ কেজি ও ম্যাগনেসিয়াম দস্তা বরণ ২ কেজি। এটি পাইকারি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। বিঘাপ্রতি ফলন আসে ১৭৫ কেজি।
এলাকাবাসী করিম উদ্দিন বলেন, গাছে গাছে ফলন এসেছে। ফলনের ভারে কিছু গাছ নুয়ে পড়েছে। প্রতিটি গাছের সঙ্গে অসংখ্য ফুল ও ফল ধরেছে। লম্বা আকৃতির চিয়াসিডের গাছগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। এটি মূলত ধান বা গমের মতোই এক ধরনের বীজ। ভাত বা রুটি খেতে খেতে মুখে যদি অরুচি চলে আসে তাহলে কিনোয়া হতে পারে উত্তম বিকল্প। এবার ওষধি ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন সুপার ফুড হিসেবে খ্যাত চিয়াসিড ও কেনোয়া চাষ হচ্ছে এ উপজেলায়। দানাদার এ ফসল মানবদেহে বিভিন্ন রোগের কার্যকরী ওষুধ হিসেবে কাজ করায় এর চাষাবাদ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে অন্য ফসলের চেয়ে এ চাষাবাদে লাভের স্বপ্ন বুনছেন কৃষক। আশপাশের লোকজন বিদেশি কিনোয়া দেখতে ভিড় করছে।
কৃষক কাজল হোসেন বলেন, এবার হাকিমপুর উপজেলায় প্রথমবারের মতো চিয়াসিড ও কেনোয়া চাষ হয়েছে। এটি দেখতে সাদা ও কালো রঙের তিলের মতো ছোট। বিভিন্ন রোগের কার্যকরী ওষুধ হিসেবে কাজ করায় এর চাষাবাদ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে হাইপ্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন ও এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। নতুন জাতের এ ফসল ইতোমধ্যে কাটতে শুরু করেছে। তাই দেখার জন্য আসছি। তবে ফলন যদি ভালো হয় তাহলে আগামীতে আমিও চাষ
করব।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আরজেনা বেগম বলেন, হাকিমপুর উপজেলায় এই প্রথমবারের মতো চিয়াসিড ও কেনোয়া চাষ হয়েছে। বোয়ালদাড় গ্রামের শামীম খান ২২ শতক জমিতে কেনোয়া ও ২২ শতক জমিতে চিয়াসিড চাষ করেছেন। তিনি পঞ্চগড় ও ঝিনাইদহ থেকে বীজ নিয়ে এসেছেন। তিনি সবসময়ই নতুন কিছু আবাদ করে থাকেন। চিয়াসিড ও কেনোয়া একটি উপকারী ফসল। এতে হাইপ্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন ও এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। নতুন জাতের এই ফসল ইতোমধ্যে কাটতে শুরু করেছে। এটি ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। আশা করি, ফলন ভালো হবে এবং দামও ভালো পাবে। আমরা সব সময় তাকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। তার দেখে যদি কেউ চাষাবাদ করতে আগ্রহ হয় তাহলে আমরা পরামর্শ দিয়ে
যাব।