Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 8:44 am

হুমকিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের শতাধিক বাসিন্দা

কামরুল হাসান নিরব, ফেনী: ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুরে অবৈধ বালি উত্তোলনের কারণে ফেনী নদীতে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটছে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েক শ’ বাসিন্দার। আশ্রয়ণ প্রকল্প সংলগ্নপাড় বর্তমানে ভেঙে নদীতে মিশে যাচ্ছে। এতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের শতাধিক বসতি ঘর বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় ঝুঁকিতে দিনাতিপাত করছেন অনেকেই।

আশ্রয়ণ প্রকল্পকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে চলতি অর্থবছরে ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুরোধে তিলকের চরবালি মহালটি ইজারা না দিলেও দেদার বালি উত্তোলন করেছে বালিদস্যুরা। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পুরো এলাকা। এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতিরোধের মুখে বালি উত্তোলন বাহিনীর মূলহোতারা পালিয়ে যায়। এ সময় বালি উত্তোলনের একটি ড্রেজার মেশিন, একটি বালির বোট ও এক চালককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, কয়েক দশক আগে শুভপুর ইউনিয়নের জয়চাদপুর ও সোনাপুর গ্রামের তিলকের চর এলাকার সরকারি জায়গায় কয়েক দফায় ছিন্নমূল ৪৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। বর্তমানে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে তিন শতাধিক লোকের বসবাস।

ফেনী নদীর তীরবর্তী আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা থেকে বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে প্রায় সাংবাদিকদের জানান। দুইশ গজের মধ্যে চলে এসেছে ফেনী নদী। আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকাকে নদীতে ভাঙন থেকে রক্ষা করতে ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলের পক্ষ থেকে দফায় দফায় সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ফেনী জেলা প্রশাসন চলতি বছর ফেনী নদীর তিলকের চর বালি মহালটি ইজারা দেয়নি। কিন্তু ইজারা না থাকলেও অবৈধভাবে নদী-তীরবর্তী এলাকায় ডেজার মেশিন বসিয়ে ৮০-১০০ ফুট গভীর করে তীরবর্তী ফসলি জমির বালি কেটে নিয়ে যাচ্ছে বালুদস্যরা।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ফেনী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিজিবি, ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ের করেরহাট এলাকার বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলাম, মোহাম্মদ রাসেল ও ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপালের নিজভূগুরা গ্রামের মোহাম্মদ হারুনের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এলাকার বসতভিটা ও আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীদের বিভিন্ন সময়ে বালুদস্যুরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হুমকি-ধামকি দেয় বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।

আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার স্থানীয় অহিদের রহমান, জোসনা, আমির হোসেন, রফিক, আনোয়ার হোসেন পলাশ মোর, ফিরোজ, সাহারা খাতুন, মোহাম্মদ আলীসহ অনেকের ছাগলনাইয়ার শুভপুরে জনতার প্রতিরোধের মুখে ফেনী নদীতে ড্রেজার রেখে পালিয়ে যায় বালি-খেকোরা। এলাকাবাসী সাংবাদিকদের অভিযোগে জানান, নদীর ওপার থেকে কামরুলের লোকজন দলবেঁধে এসে দিনে-রাতে তাদের এলাকা থেকে বালি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তারা সরকারের দেয়া বসতভিটা হারালে কোথায় থাকবেন এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বলে তারা কোনো অভিযোগ বা বন্ধ করতে বললে কামরুলের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে।

এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর পক্ষে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, সরকার তিলকের চর ইজারা না দিলেও অবৈধভাবে বালি ব্যবসায়ী কামরুল, ব্রাসেল ও হারুনের নেতৃত্বে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ফেনী নদীর তীরবর্তী আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার বালি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌমিতা দাশ বলেন, সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় বালি উত্তোলন করে এলাকাটিকে যারা ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা রক্ষার দাবিতে এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের দেয়া অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পটি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।