কর সংগ্রহের সময় যারা রাজস্ব কর্মকর্তাদের হুমকি দেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর চেয়ারম্যান। তার ঘোষণাকে আমরা সতর্ক সাধুবাদ জানাই। এনবিআর চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, রাজস্ব কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়াকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হুমকি হিসেবে গণ্য করা হবে এবং হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে একাত্ম হয়ে বলতে চাই আইন প্রয়োগে বাধাদানকারী যে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমরা আরও বলতে চাই কেন কিছু ব্যক্তি রাজস্ব কর্মকর্তাদের কাজে বাধা সৃষ্টি করেন, সেটিও তলিয়ে দেখা হোক। উভয় দিকে উদ্যোগ নিলে তবেই পূর্ণ সমাধান মিলতে পারে; নইলে এক পক্ষে স্বেচ্ছাচারিতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
কর না দেওয়ার সংস্কৃতি আমাদের দেশে প্রবল। সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় আস্তে আস্তে ব্যক্তি খাতে করদাতার সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে ব্যবসায়িক খাতেও। তবে যেটি সত্যি, কর দেওয়ার ব্যাপারে বিপুল অংশ কমবেশি উদাসীনতা দেখাচ্ছে; ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতাও রয়েছে। এও বলতে শোনা যায়, করের অর্থের যথাযথ ব্যবহারের নিশ্চয়তা কী? এ ব্যাপারে প্রত্যেককেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। সরকারের দায়িত্ব হবে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে করের অর্থের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা। অনেকের অভিযোগ, কর দেওয়ার প্রক্রিয়া জটিল এবং এতে নানা পর্যায়ে হয়রানির শিকার হতে হয়। শুধু ব্যক্তি খাত নয়, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও এটি সত্য। অনেক পণ্য তৈরিতে একাধিক পর্যায়ের পাশাপাশি চূড়ান্ত পণ্যেও কর দিতে হয়। সব মিলিয়ে কর প্রদানকে কীভাবে সরল করা যায়, তা নিয়ে এনবিআরকে কাজ করতে হবে। কর দেওয়া যে সবার দায়িত্ব ও রাষ্ট্র যে কর দ্বারাই উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নিতে পারে সেরকম সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড এনবিআরের পক্ষ থেকে কার্যকরভাবে প্রচার করা উচিত। রাজস্ব কর্মকর্তারা কেন হুমকির শিকার হবেন? এনবিআর কী দৃঢ়তার সঙ্গে দাবি করতে পারবে, তাদের একশ্রেণির কর্মকর্তা ব্যবসায়ীদের হয়রানি করেন না? প্রক্রিয়াগত বা জটিল হিসাবের কারণে অনেক সময় ভুল হতে পারে। সেগুলো ঠিক করার বিষয়ে এনবিআরের যথেষ্ট মনোযোগ থাকা দরকার। মূল সমস্যার সমাধান না করে করদাতাদের হয়রান করা উচিত নয়। অন্যদিকে যারা রাজস্ব কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন, তাদেরও মনে রাখতে হবে এসব কর্মকর্তা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কাজ করছেন। কেউ কোনো ধরনের অনিয়ম করলে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করা যেতে পারে। আলোচনার মাধ্যমেও সমস্যার সমাধান করা যায়। এখন ডিজিটাইজেশনের যুগ। আমরা আশা করবো, কর দেওয়া থেকে শুরু করে সনদ প্রদান সবকিছু যদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ও স্বচ্ছতার সঙ্গে করার ব্যবস্থা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এ-ধরনের সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে না।