একজন ৭০ বছর বয়সী মানুষ সারাজীবন গড়ে ২০০ কোটিবার হৃৎস্পন্দন ঘটায়। এই যে ২০০ কোটিবার হার্টবিট ঘটল, তা কি অবিরাম নিরবচ্ছিন্নভাবে চলে? কখনও কখনও হার্টবিট তাল ও লয় কেটে ফেলে। শরীরের প্রয়োজনে দ্রুত লয়ে, আবার কখনও তা ধীর লয়ে স্পন্দিত হয়।
রোগীরা প্রায়ই বলেন, তাদের ড্রপবিট হচ্ছে। পুরো দিন মেঘমুক্ত নীলাকাশ যেমন ভালো নয়, তেমনি ড্রপবিটমুক্ত নিরবচ্ছিন্ন হার্টবিটও ভালো নয়। তবে স্বাভাবিক মাত্রার বেশি হলে চিকিৎসা করা জরুরি। ড্রপবিট মাত্রা ছাড়ালে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারেন। হঠাৎ মূর্ছা গিয়ে মাথায় মারাত্মক আঘাত পেতে পারেন, রানের বড় হাড় ভেঙে যেতে পারে, এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।
আগে গ্রামেগঞ্জে শোনা যেত, অমুককে ঘুমের মধ্যে ভূতে মেরে ফেলেছে, কিংবা সুস্থ-সবল মানুষটি জিনের আসর লেগে মরে গেল। এমনকি কোনো পরিবারের একাধিক সদস্য অল্প বয়সে হঠাৎ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। কেন হƒৎপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দপতন ঘটে ক. হৃৎপিণ্ডের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থায় সমস্যা, খ. রক্তনালির ব্লকের সমস্যা, গ. হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশির সমস্যা, ঘ. ভাল্ভের সমস্যা, ঙ. হৃৎপিণ্ডের আচ্ছাদন বা পেরিকার্ডিয়ামের রোগ, চ. শরীরের অন্যান্য অঙ্গের রোগের কারণে হৃৎপিণ্ডের ছন্দপতন সমস্যা।
বাড়িতে যেমন পানি-বিদ্যুতের লাইন থাকে, হার্টেও তেমনি রয়েছে। হার্টের পানির লাইন হলো রক্তনালি বা করোনারি ধমনিগুলো। আর বৈদ্যুতিক লাইন হলো তার সুনির্দিষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ লাইন।
হƒৎপিণ্ডের ডান অলিন্দের উপরিভাগের ছাদে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র (এসএ নোড) রয়েছে। সেখান থেকে কতগুলো সুনির্দিষ্ট সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের চারটি প্রকোষ্ঠে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ লাইনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জালিকা সমগ্র হার্টের মাংসপেশিকে সংযুক্ত এবং উদ্দীপ্ত করে। এই উদ্দীপনার ফলেই হার্টের মাংসপেশিগুলো সংকোচন-প্রসারণ ক্রিয়ার মাধ্যমে আজীবন গড়ে ২০০ কোটিবার বিট করে আমাদের বাঁচিয়ে রাখে।
এই বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থার যেকোনো পর্যায়ে গলদ দেখা দিতে পারে, যা সহ্যক্ষমতার বাইরে চলে গেলে মেরামত করার প্রয়োজন পড়ে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান কার্যকরভাবে বিভিন্ন যন্ত্রের (যেমন পেসমেকার) সাহায্যে এ সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। প্রথম দিকের পেসমেকার আকারে বড় ছিল এবং পরে রোগীর এমআরআই করার প্রয়োজন হলে তা করা যেত না। এখনকার পেসমেকার অত্যন্ত ছোট এবং এমআরআই সহনশীল। কলার বোনের একটু নিচে লোকাল অবশ করে মাত্র এক ইঞ্চি পরিমাণ চামড়া কেটে এটি স্থাপন করে দিলে ১০ থেকে ১৫ বছর নিশ্চিন্তে রোগীকে নিরাপদে রাখা যায়। (বাকি অংশ আগামীকাল)
ডা. মাহবুবর রহমান
সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও সিসিইউ ইনচার্জ
ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ঢাকা
