হৃৎপিণ্ডের ছন্দপতন

গতকালের পর

পানির পাইপ যেমন মরিচা ধরে সরু হয়ে যেতে পারে, তেমনি বিভিন্ন রোগে (যেমন ডায়াবেটিস, হাইকোলেস্টেরল, হাইপ্রেশার, ধূমপান প্রভৃতি) রক্তনালির পথ সরু হয়ে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হতে পারে। রক্তের মাধ্যমে যেহেতু অক্সিজেন ও খাদ্য প্রতিটি কোষে পৌঁছায়, তাই সেটি সরু বা ব্লক হয়ে থাকলে মাংসপেশির কাজ দুর্বল বা অকেজো হয়ে পড়তে পারে। উপসর্গ হিসেবে হƒৎপিণ্ডের তাল কেটে যেতে পারে। রোগী হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে বা মাথা ঘুরে পড়ার উপক্রম হতে পারে।

এনজিওগ্রামের মাধ্যমে ব্লক নির্ণয় করে যথাযথ ওষুধ প্রয়োগ, প্রয়োজনে রিং (স্টেনটিং) পরিয়ে বা ওপেন হার্ট সার্জারি করে নিলে সমস্যার একটা টেকসই সমাধান মিলবে। হঠাৎ মৃত্যুর একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো মাংসপেশির রোগ। হৃৎপিণ্ড যে চারটি কক্ষ বা চেম্বার দিয়ে তৈরি, তার মধ্যে বাম নিলয় ও ডান নিলয়ের দেয়ালগুলো অস্বাভাবিক হারে মোটা হয়ে যেতে পারে। তাতে এই চেম্বারগুলো ঠিকমতো সংকোচন-প্রসারণের কাজ করতে পারে না। প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে এটি বংশগতভাবে ছড়ায়। দেখা যায়, একই পরিবারের একাধিক সদস্য অল্প বয়সে হঠাৎ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

কার্ডিওমায়োপ্যাথির চিকিৎসায় যথাযথ ওষুধ প্রয়োগ, বাড়তি মাংসপেশি বেলুন অ্যালকোহল এনজিওপ্লাস্টি বা অপারেশন করে চেঁছে ফেলাসহ ছন্দপতনরোধী যন্ত্র (একধরনের স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক শক দেয়ার ব্যাটারি) কার্যকর ভূমিকা পালন করে। হƒৎপিণ্ডের যে চারটি ভাল্ভ রয়েছে, তার মধ্যে বাম নিলয়ের প্রবেশমুখ ও বহির্মুখের সমস্যা মূলত প্রধান। এর মধ্যে অল্প বয়সে বাতজ্বর থেকে মাইট্রাল ভাল্ভ এবং বেশি বয়সে ক্যালসিফিক এয়োর্টিক ভাল্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। একপর্যায়ে এর ছন্দপতন (আর্টিফিশিয়াল ফাইব্রিলেশন) হলে রোগী স্ট্রোকসহ নানা জটিলতায় পড়তে পারে। এ সমস্যার জন্য চিকিৎসার পাশাপাশি অলিন্দে যাতে রক্ত জমাট বাঁধতে না পারে, সেজন্য যথাযথ ওষুধ প্রয়োগ করে মৃত্যুঝুঁকি কমিয়ে আনতে হবে। বিভিন্ন রোগ, যেমন যক্ষ্মা, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ক্যানসার প্রভৃতি দিয়ে পেরিকার্ডিয়াম (হƒৎপিণ্ডের আচ্ছাদন) নিজেই আক্রান্ত হতে পারে। এর ফলে হার্ট স্বাভাবিকভাবে সংকোচন-প্রসারণের কাজ করতে পারে না। অসুস্থ শক্ত পেরিকার্ডিয়াম তখন সাঁড়াশির মতো হƒৎপিণ্ডে চেপে ধরে। ফলে হার্ট ফেইলিউরসহ বিভিন্ন ছন্দহীনতা সৃষ্টি হয়। চিকিৎসা করলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। হƒৎপিণ্ড একটি বিশেষায়িত অঙ্গ হলেও এটি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন নয়, বরং শরীরের নানা রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া দিয়ে প্রভাবিত। যেমন ফুসফুসের কোনো রোগ (কভিড লাংস), থাইরয়েড হরমোনের রোগ, এমনকি মস্তিষ্কের কিছু কিছু রোগও হƒৎপিণ্ডের ছন্দপতন ঘটাতে পারে। (শেষ)

ডা. মাহবুবর রহমান সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও সিসিইউ ইনচার্জ, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০