Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 2:05 am

হোল্ডিং কোম্পানিতে রূপান্তর হচ্ছে পিডিবি

পলাশ শরিফ: নানা বাধা সত্ত্বেও হোল্ডিং কোম্পানিতে রূপান্তর হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। আর পিডিবির আওতাধীন বিদ্যুৎ বিতরণ জোনগুলোকে এর অধীনে ছয়টি ডিস্ট্রিবিউশন (বিতরণ) কোম্পানি গঠন করা হবে।  যদিও কোম্পানিতে রূপান্তরের সুফল নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও বিদ্যুৎ বিভাগের তাগিদের পরিপ্রেক্ষিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে পিডিবি।

এর আগে গত মাসের মাঝামাঝিতে বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) পর্যালোচনা সভায় পিডিবিকে হোল্ডিং কোম্পানিতে রূপান্তরের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই সভায় পিডিবির চেয়ারম্যানকে সর্বোচ্চ চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনার পর হোল্ডিং কোম্পানি বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে পিডিবি।

প্রতিবেদনে পিডিবিকে হোল্ডিং কোম্পানি ও তার অধীনে আরও ছয়টি ডিস্ট্রিবিউটর কোম্পানির অর্গানোগ্রামের একটি রূপরেখাও তৈরি করা হয়েছে। গত সপ্তাহে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে সংস্থাটি।

পিডিবির প্রস্তাব অনুযায়ী, হোল্ডিং কোম্পানিতে রূপান্তরের পর মূল কোম্পানির আট সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে পরিচালক পদমর্যাদার আরও ছয়জন সদস্য থাকবেন। অন্যদিকে হোল্ডিং কোম্পানির অধীনে দেশজুড়ে সাউদার্ন জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, সিলেট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, সেন্ট্রাল জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, নর্দান জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, রংপুর জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও কুমিল্লা জোন- এ ছয়টি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গঠন করা হবে।

খুলনা ও বরিশাল এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকবে সাউদার্ন জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। সিলেট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি দায়িত্ব পালন করবে সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায়। সেন্ট্রাল জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্ব পালন করবে ময়মনসিংহ ও আশপাশের এলাকায়। নর্দান জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির দায়িত্ব থাকবে রাজশাহী বিভাগ। রংপুর জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও কুমিল্লা জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি যথাক্রমে রংপুর ও ময়নামতি বিভাগে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্ব পালন করবে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ছয় ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে পিডিবির চেয়ারম্যান পদাধিকারবলে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকবেন। এছাড়া একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ করা হবে। পরিচালনা পরিষদে পাঁচজন করে নির্বাহী পরিচালক পদ রাখা হবে।

জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ শেয়ার বিজকে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবিকে হোল্ডিং কোম্পানিতে রূপান্তরের রূপরেখার খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। সম্প্রতি তা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। তারা পর্যালোচনা শেষে এ বিষয়ে মতামত দেবেন। এরপর তা চূড়ান্ত করা হবে।

সূত্রমতে, ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে পিডিবিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা আরও সহজ করতে পিডিবিকে ভেঙে পেট্রোবাংলার আদলে করপোরেশন গঠনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলকে নিয়ে পৃথক কোম্পানি গঠন করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ কোম্পানির জন্য একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কিছু লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে পিডিবিকে গত বছরের আগস্টের মধ্যে রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলসহ নবগঠিত নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (নওজোপাডিকো) লিমিটেডের সীমানার মধ্যে থাকা পিডিবির জনবল, সম্পদ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম হস্তান্তরের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। নবগঠিত কোম্পানিকে কার্যকর করার জন্য সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও ভেন্ডর অ্যাগ্রিমেন্ট (ভিএ) স্বাক্ষরের জন্য গত বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তবে শ্রমিক-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে পিডিবিকে কোম্পানিকরণের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে সরকার। সব পক্ষের সমঝোতা শেষে গত বছর অক্টোবরে যাত্রা শুরু করে নতুন কোম্পানিটি। এছাড়া খুলনা ও বরিশাল এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্ব ২০১২ সালে দেওয়া হয় ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত বিদেশি দাতা সংস্থার চাপেই পিডিবিকে হোল্ডিং কোম্পানি করা হচ্ছে। যদিও কোম্পানিতে রূপান্তরের অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। এতে গ্রাহকরা পিডিবির মতো সেবা পাবেন না। অন্যদিকে সরকারেরও তেমন কোনো লাভ হবে না। এর আগেও ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য পিডিবি ভেঙে পৃথক কোম্পানি ডেসা করা হয়। পরে ডেসা ভেঙে ডেসকো ও ডিপিডিসি করা হয়। আবার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা নিয়ে গঠন করা হয় ওজোপাডিকো। এছাড়া দেশের গ্রামীণ জনপদে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। কোম্পানির সংখ্যা বাড়লেও সেবার মান বাড়ছে না। তাই হোল্ডিং কোম্পানি করার সুফল নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ খাতের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতউল্লাহ বলেন, কোম্পানি গঠনের পর ডিপিডিসির অবস্থার সামান্যই উন্নতি হয়েছে। উল্টো জনবল খাতে ব্যয় বেড়ে গেছে। আবার মুনাফার অংশ কর্মীদের দিতে হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। পিডিবিকে কোম্পানিতে রূপান্তর করলেও একই ধরনের ঘটনা ঘটবে। তাই কোম্পানির পরিবর্তে এটির বর্তমান রূপেই সংস্কার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।