হোয়াইটওয়াশের যন্ত্রণায় পুড়লো বাংলাদেশ

ক্রীড়া ডেস্ক: স্কোরবোর্ডে ১০২ রান। কোনো উইকেট নেই। ওভার ২১.২। দারুণ খেলছিলেন ইমরুল কায়েস-তামিম ইকবাল জুটি। এ সময় টিভি সেটের সামনে স্বাগতিক দর্শকরা একটু নড়াচড়া দিয়েই বসলেন। বাংলাদেশ আজ বড় স্কোর গড়বে! অন্তত স্বাগতিকদের সঙ্গে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় পড়ছে না মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। কিন্তু আগের দুই ম্যাচের সেই দুঃসহ স্মৃতি ফিরে এলো টাইগারদের ব্যাটিংয়ে। ১৭৯ রান উঠতেই নেই ৭ উইকেট। ২০০ পার হওয়া নিয়েই তখন টানাটানি। শেষ পর্যন্ত নুরুল হাসান সোহানের ব্যাটে ভর করে মাঝারি মানের স্কোর গড়ে লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা। সেই পুঁজি নিয়ে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াতে পারেনি টিম বাংলাদেশ। ৫২ বল আর ৮ উইকেটে হাতে রেখে জিতে যায় কেন উইলিয়ামসনের দল। আর তাতেই আড়াই বছর আগের হোয়াইটওয়াশের স্মৃতি ফিরে এলো গতকাল লেনসনে।

এর আগে সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২৬ আগস্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ হেরে হোয়াইটওয়াশের যন্ত্রণায় পুড়েছিল বাংলাদেশ। এরপর বদলে যায় বাংলাদেশ। বিশ্বের বড় দলের বিপক্ষে টানা সিরিজ জিতেছেন মাশরাফিরা। কিন্তু হোয়াইটওয়াশ হতে হয়নি। বরং প্রতিপক্ষকে এ লজ্জা দিতে প্রস্তুত থাকে টাইগাররা। এবার সেই লজ্জায় পড়তে হলো সফরকারীদের।

গতকাল টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে লেনসনের ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে দারুণ খেলতে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু ইনিংসের মাঝপথে ৭ উইকেট হারিয়ে বড় স্কোরের স্বপ্ন ভেঙে যায় দলটির। শেষ পর্যন্ত নুরুল হাসান সোহানের ৪৪ রানে ভর করে নির্ধারিত ওভার শেষে ৯ উইকেটে ২৩৬ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ২ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় নিউজিল্যান্ড।

আসলে এমন হারের কোনো ব্যাখ্যাও নেই মাশরাফি বিন মুর্তজার কাছে, ‘এই হারের ব্যাখ্যা দেওয়াটা আসলে খুব কঠিন। এমন শুরুর পর আমরা আশা করছিলাম রানটা অনেক বড় হবে। বিশেষ করে সাত-আটজন ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমে থাকায় আশা করছিলাম আরও বড় রান হবে। ১ উইকেটে ১০০ রান এমন শুরু তো আমরা সব সময় করতে পারি না। ধসের ব্যাপারটি আমাদের সঙ্গে বার বার হচ্ছে, হয়তো আমরা মানসিকভাবে ততটা দৃঢ় ছিলাম না।’

কিন্তু নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন নেলসনের মাঠে কীভাবে ব্যাট করতে হয়। যদিও ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান টম ল্যাথামকে এলবিডব্ল–র ফাঁদে ফেলে সাজঘরে পাঠিয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। পরের ওভারে অন্য ওপেনার মার্টিল গাপটিপ হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন। বলা যায়, তখন কিউইদের ২ উইকেট। এ সময় আরও একটি সুযোগ আসে স্বাগতিকদের চাপে ফেলার। কিন্তু ইনিংসের চতুর্থ ওভারে  মোস্তাফিজের বলে প্রথম সিøপে নেল ব্রমের সহজ ক্যাচ ছাড়েন কায়েস। আগের ম্যাচের এই সেঞ্চুরিয়ান থামেন ৯৭ রান করে মোস্তাফিজের বলেই। তখন ম্যাচ থেকে অনেক দূরে চলে গেছে টাইগাররা। শেষ পর্যন্ত কেন উইলিয়ামসনের অপরাজিত ৯৫ রানে ভর করে ৮ উইকেটের জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। স্বাগতিকদের এমন ব্যাটিংয়ে সফরকারী দলের অধিনায়ক বললেন, ‘পরপর এক-দুটি উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মানসিকভাবে থিতু হয়ে যে ব্যাট করতে হবে, সেটা করতে পারিনি আমরা। ওরা যে মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করেছে, আমরা সেই মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করতে পারিনি। এটাই দুই দলের পার্থক্য গড়ে  দেয়।’

ভালো শুরুর পরও সেটা ধরে রাখতে না পারায় ভীষণ হতাশ মাশরাফি। তবে অধিনায়কের বিশ্বাস, ঠিকই সমাধান পেয়ে যাবেন তারা। এখনও নিউজিল্যান্ড সফরে টাইগাররা এখন তিনটি টি-টোয়েন্টি ও দুটি টেস্ট খেলবে। টাইগারদের রঙিন পোশাকের অধিনায়ক বলছেন, ওয়ানডে সিরিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে বাকি ম্যাচগুলো ভালো খেলার চেষ্টা করবে টিম বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৩৬/৯ (তামিম ৫৯, ইমরুল ৪৪, সাব্বির ১৯, মাহমুদউল্লাহ ৩, সাকিব ১৮, মোসাদ্দেক ১১, নুরুল ৪৪, তানভীর ৩, মাশরাফি ১৪, তাসকিন ৪*, মোস্তাফিজ ০*; সাউদি ১/৪৫, প্যাটেল ১/৪০, হেনরি ২/৫৩, নিশাম ১/২৮, স্যান্টনার ২/৩৮, উইলিয়ামসন ১/২৪)।

নিউজিল্যান্ড: ৪১.২ ওভারে ২৩৯/২ (গাপটিল আহত অবসর ৬*, ল্যাথাম ৪, উইলিয়ামসন ৯৫*, ব্রুম ৯৭, নিশাম ২৮*; মাশরাফি ০/৩৬, মোস্তাফিজ ২/৩২, তাসকিন ০/৪১, সাকিব ০/৫৫, তানভীর ০/২০, সাব্বির ০/২০, মোসাদ্দেক ০/২৬, মাহমুদউল্লাহ ০/৬)।

ফল: নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: নিউজিল্যান্ড ৩-০তে জয়ী।

ম্যাচসেরা: কেন উইলিয়ামসন।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০