সাম্প্রতিক সময়ে হ্যান্ড-ফুট-মাউথ রোগ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের শরীরের নানা জায়গায় পানিভর্তি ফোসকাজাতীয় ক্ষত, মুখের ভেতরে ঘা, কিছু খেতে না পারা, মুখ দিয়ে ক্রমাগত লালা পড়া, সঙ্গে অল্প জ্বর হতে পারে। ফোসকাগুলো দেখতে অনেকটা জলবসন্তের মতো হলেও এটা জলবসন্ত নয়। এটি একটি ভাইরাসবাহিত রোগ। রোগটি খুবই ছোঁয়াচে, তবে এর তীব্রতা কম আর জটিলতা নেই বললেই চলে। তাই ভয়ের কোনো কারণ নেই।
কক্সেকি নামক ভাইরাসের কারণে মূলত এ রোগ হয়। এতে আক্রান্ত শিশুর নাকের পানি, লালা, ফোসকা ফাটা পানি, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে, এমনকি আক্রান্ত শিশুর পায়খানার মাধ্যমেও অন্যরা সংক্রমিত হতে পারে। ভাইরাসটি শিশুর শরীরে প্রবেশের চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ দেখা যায়। এছাড়া খেলনা বা দরজার নব বা অন্য আসবাবেও ভাইরাস অবস্থান করতে পারে এবং এগুলো কেউ স্পর্শ করলেও সে আক্রান্ত হতে পারে। যেসব জায়গায় জনসমাগম বেশি, যেমন স্কুলে একটি শিশু আক্রান্ত হলে তার কাছ থেকে এ ভাইরাস অতি দ্রুত অন্য অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। মারাত্মক জটিলতা না থাকলেও মুখে ও গলায় ব্যথা, খেতে না পারার কারণে কখনও কখনও শিশুর শরীরে পানির ঘাটতি হতে পারে। খুবই কম হলেও কখনও কখনও এ ভাইরাস মস্তিষ্কে প্রবেশ করে সংক্রমণ করতে পারে। এছাড়া অনেক সময় হাত বা পায়ের আঙুলের নখ পড়ে যেতে পারে, যা অবশ্য অল্প দিনের মধ্যে আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।
সাধারণত ৭-১০ দিনের মধ্যে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। স্বাভাবিক পরিচর্যা, খাবার, বিশেষ করে পানি বা পানীয় পর্যাপ্ত দিতে হবে, যাতে প্রসাব ঠিকমতো হয়। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার বিশেষ করে ফলের রস মুখের ব্যথা বাড়াতে পারে। জ্বর থাকলে নির্দিষ্ট মাত্রার প্যারাসিটামল দেয়া যাবে, তবে অ্যাসপিরিন দেয়া ঠিক হবে না। এর বাইরে কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিভাইরাল বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের কোনো ভূমিকা নেই এবং অহেতুক এগুলো দেয়ার দরকার নেই। হাঁচি-কাশির শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। ঘর, ঘরের মেঝে, খেলনা পরিষ্কার রাখতে হবে। মুখের ভেতর হাত ঢোকানোর অভ্যাস দূর করতে হবে। ভিড়ভাট্টা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা ভালো।
অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা
বিভাগীয় প্রধান, শিশুরোগ বিভাগ
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা