শাহরিয়ার সুলতান: বিশেষজ্ঞরা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে বারবার করে হাত ধুতে পরামর্শ দিচ্ছেন। এ অবস্থায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবানের চেয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজারই এগিয়ে রয়েছে। ফলে চাহিদা বেড়ে গেছে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের। অনেক সময় তা দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে এবং চলছে কালোবাজারিও। তবে বিশেষজ্ঞরা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চেয়ে সহজলভ্য সাবানকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
নভেল করোনাভাইরাস তিনটি উপাদানে গঠিত। এ ভাইরাসের সবচেয়ে বাইরের অংশে থাকে গ্লাইকোপ্রোটিনের কাঁটার মতো অংশ। এগুলো দিয়ে ভাইরাসটি কোনো জীবন্ত কোষে ঢোকার পর আটকে থাকে। দ্বিতীয় উপাদানটি হলো রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (আরএনএ)। কোনো জীবন্ত কোষের ভেতরে ভাইরাসটি ঢোকার পর বংশবিস্তার শুরু করে আরএনএ’-র প্রতিলিপি তৈরির মাধ্যমে। তৃতীয় উপাদানটি হলো লিপিড স্তর, যা ভাইরাসের অন্যান্য অংশকে আবদ্ধ করে রাখে। লিপিড স্তর ভাঙতে পারলে ভাইরাসটিকে খতম করা সম্ভব।
আণবিক গঠন অনুযায়ী সাবানের দুটো অংশ—হাইড্রোফিলিক ও হাইড্রোফোবিক। হাইড্রোফিলিক অংশের আকর্ষণ পানির অণুর প্রতি বেশি, অন্যদিকে হাইড্রোফোবিক অংশটি ভাইরাসের লিপিড স্তরের প্রতি আকর্ষিত হয়। এজন্য সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার সময় পারস্পরিক ক্রিয়ায় লিপিড স্তর ভেঙে যাওয়ায় ভাইরাসটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
প্রবহমান পানিতে তাই সাবান দিয়ে ফেনা তৈরি করে ভালোভাবে কচলে হাত ধুতে হবে। হাতের পেছনের অংশ, আঙুলের ফাঁক ও নখের নিচের অংশসহ হাতের সব অংশই অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মূল উপাদান অ্যালকোহল করোনাভাইরাসের লিপিড স্তর ভেঙে ফেলতে পারে; কিন্তু সাবানের মতো ভাইরাসের লিপিড স্তরের সঙ্গে অ্যালকোহলের কার্যকারিতা দ্রুত হয় না। তাই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চেয়ে সাবান ভাইরাস নিষ্ক্রিয় করতে বেশি উপযোগী।
সাবানপানির ব্যবহার যেখানে সম্ভব নয়, সেখানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সাবানের বিকল্প হতে পারে। দুই ধরনের হ্যান্ড স্যানিটাইজার রয়েছে—অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও অ্যালকোহলমুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার। অ্যালকোহলমুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চেয়ে কম কার্যকর। হ্যান্ড স্যানিটাইজারে অ্যালকোহলের পরিমাণ অন্তত ৬০ শতাংশ হতে হবে। অ্যালকোহলের পরিমাণ এর চেয়ে কম হলে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কার্যক্ষমতা কমে যাবে।
গণমাধ্যমকর্মী